আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ক্যারিবীয় অঞ্চলে। ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানা এই ঝড়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
মার্কিন ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে, ‘মেলিসা’ একটি ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়। প্রবল বাতাস, জলোচ্ছ্বাস ও ভারি বৃষ্টির কারণে ব্যাপক বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বহু গ্রামীণ এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ঝড়ে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে জ্যামাইকা। দেশটির সরকার জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরি সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অনলাইন ত্রাণ প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে।জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “মেলিসার মতো দুর্যোগ মোকাবিলার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই।”
দেশটিতে উদ্ধারকাজ এখনো পুরোপুরি শুরু করা যায়নি। বহু মানুষ গৃহহীন এবং অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। মেলিসা আঘাত হানার সময় প্রায় ২৫ হাজার পর্যটক জ্যামাইকায় অবস্থান করছিলেন। প্রতিবেশী হাইতিতেও ঝড়ের প্রভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার পশ্চিমে পেটিট-গোয়াভে এলাকায় নদীর পানি উপচে পড়লে বন্যায় অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে ১০ শিশু রয়েছে। এখনো ১২ জন নিখোঁজ। ঝড়ের প্রভাব ইতোমধ্যে কিউবা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে উপকূলীয় এলাকা থেকে ৭ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাহামা দ্বীপপুঞ্জে নিরাপত্তার জন্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার ভোর নাগাদ ‘মেলিসা’ কিউবার ভূমিতে আঘাত হানতে পারে। দেশটিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলে বার্বাডোজ থেকে জ্যামাইকায় ২ হাজার ত্রাণ সরঞ্জাম পাঠানো হবে। কিউবা ও হাইতি–সহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতেও সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় মেলিসা অতিরিক্ত শক্তি অর্জন করেছে। তাদের মতে, এটি শুধু জ্যামাইকা নয়, বরং পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য একটি ভয়াবহ মানবিক সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।