নিজস্ব প্রতিবেদক,
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বন্ধুত্ব কখনও কখনও রূপ নেয় বাস্তবের গল্পে। ঠিক তেমনই এক ঘটনা ঘটেছে নাটোরে। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ব্যবসায়ী তেরি পারসন ছুটে এসেছেন বাংলাদেশের এক রাজমিস্ত্রীর বাড়িতে— শুধুই বন্ধুত্বের টানে।
তেরি পারসন বর্তমানে অবস্থান করছেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চর বালশা গ্রামে, তার বন্ধু সেতু মোল্লার বাড়িতে। পেশায় ভ্যানচালক ও রাজমিস্ত্রী সেতু মোল্লা অবসরে ফেসবুকে ভিডিও বানান। প্রায় এক মাস আগে তার একটি ভিডিওতে লাইক দেন তেরি পারসন। এরপর শুরু হয় কথোপকথন, যা ধীরে ধীরে পরিণত হয় আন্তরিক বন্ধুত্বে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ভোরে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তেরি পারসন। সেখান থেকে বন্ধুই তাকে নিয়ে যান নাটোরে নিজের বাড়িতে।
সেতু মোল্লা বলেন, “আমি অবসরে ফেসবুকে ভিডিও বানাই। আমার একটি ভিডিও দেখে তেরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমরা নিয়মিত কথা বলতাম— সে আমাকে ভাইয়ের মতো মনে করে, আমিও তাকে খুব পছন্দ করি। আমি আমন্ত্রণ জানালে সে বাংলাদেশে আসে।”
বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন তেরি পারসন। সঙ্গে এনেছেন দুই ভরি স্বর্ণের চেইন, শিশুদের জন্য খেলনা ও বিভিন্ন উপহারসামগ্রী। গ্রামে আসার পর থেকেই স্থানীয় মানুষ ও শিশুদের সঙ্গে তার বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের মুরগির মাংস ও চা তার সবচেয়ে প্রিয় হয়েছে। বন্ধুর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চড়ে তিনি ঘুরে দেখছেন গ্রামের জীবন, চলনবিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
তেরি পারসন বলেন, “বাংলাদেশে এসে বুঝেছি, সরল মানুষ কতটা আন্তরিক হতে পারে। এখানকার মানুষ অতিথিপরায়ণ ও হৃদয়বান। আমেরিকায় জীবন অনেক বিলাসী, কিন্তু এখানে মানুষ সহজভাবে বাঁচে— সেটাই সবচেয়ে সুন্দর। আমি আবারও ছয় মাস পর আসব, আর বন্ধুদের বলব, বাংলাদেশে আসো— এটা দারুণ দেশ।”
তিনি আরও ১১ দিন বাংলাদেশে থাকবেন। এই সময়টায় গ্রামীণ জীবনধারা, মানুষের আন্তরিকতা ও সরলতা কাছ থেকে অনুভব করতে চান তিনি।
খুবজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, “বন্ধুত্বের টানে এত দূর থেকে একজন মার্কিন নাগরিকের আসা সত্যিই অনন্য উদাহরণ। আমাদের চর বালশা গ্রাম ও চলনবিল নিয়ে তিনি যে প্রশংসা করেছেন, তা আমাদের জন্য গর্বের।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হওয়া এই বন্ধুত্ব এখন দুই দেশের মানুষের হৃদয়ের বন্ধনে রূপ নিয়েছে— মানবিক সম্পর্কের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে।