আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইসরায়েল, তুরস্ক এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও নতুন এক অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ নিল ইসরায়েল। চলতি মাসের শুরুতে দেশটি গাজা উপত্যকা থেকে অন্তত ৬৬ জনকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়, যাদের মধ্যে ছিলেন হামাসের প্রয়াত নেতা ইসমাইল হানিয়ার পরিবারের ১৬ জন সদস্য। তুরস্কের অনুরোধে নেয়া এই সিদ্ধান্তের ফলে গাজা ছাড়তে পেরেছেন ১৪ জন তুর্কি নাগরিক ও তাদের ৪০ জন আত্মীয়, যাদের মধ্যে স্বামী, স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মাও রয়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন হানিয়ার আত্মীয়, যাদের তুর্কি নাগরিকত্ব রয়েছে।
এই পদক্ষেপ আসে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে হওয়া যুদ্ধবিরতির চুক্তির পর, যেখানে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিল তুরস্ক। সূত্র মতে, তুরস্ক কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে হামাসকে আলোচনায় আনতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে, যা পরবর্তীতে এই মানবিক করিডোর খুলে দেওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হানিয়ার পরিবারের সদস্যদের গাজা ছাড়ার অনুমতি দেওয়া নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমধর্মী সিদ্ধান্ত। কারণ, মাত্র কয়েক মাস আগেই—২০২৪ সালের এপ্রিলে—ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত হন হানিয়ার তিন ছেলে ও চার নাতি। একই সময় দক্ষিণ ইসরায়েলের টেল শেভা শহর থেকে গ্রেফতার করা হয় তার বোন সাবাহ আল-সালেম হানিয়াকে।
এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের এমন মানবিক ছাড়কে অনেকেই আঙ্কারার সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করার কৌশল হিসেবে দেখছেন।
গাজা যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি গণমাধ্যমে তুর্কি নেতৃত্বের প্রতি সুর কিছুটা নরম হয়েছে। ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম ইয়নেট তাদের এক প্রতিবেদনে তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম কালিনকে ‘জিম্মি মুক্তি প্রচেষ্টায় সহানুভূতিশীল’ ও ‘ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী’ হিসেবে উল্লেখ করে।
ইসরায়েলি বিশ্লেষক বেন ক্যাসপিটও মারিভ পত্রিকায় লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট এরদোগানের উত্তরসূরি হিসেবে ধরা পড়া বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মহল ‘আরও বাস্তববাদী ও কূটনৈতিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করে।
ইসরায়েলি চেম্বার অব কমার্স ফেডারেশনের সভাপতি উরিয়েল লিন জানিয়েছেন, গাজার ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তুরস্কের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “তুরস্ক কখনোই ইসরায়েলের শত্রু ছিল না। বরং দুই দেশের মধ্যে বহু বছর ধরে দৃঢ় অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও পর্যটন সম্পর্ক বিদ্যমান।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ইসরায়েলের পররাষ্ট্রনীতি যেন আবেগ নয়, বরং বিচক্ষণতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়—এটাই সময়ের দাবি।”
হানিয়ার পরিবারের সদস্যদের গাজা ছাড়ার অনুমতি শুধুই মানবিক বিবেচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত হতে পারে, যেখানে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ—দুটোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।