আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তান সতর্ক করে বলেছে—আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান যদি তাদের ভূখণ্ডে আশ্রয় নেওয়া সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে কাবুল ও ইসলামাবাদের মধ্যে সোময়ীনভাবে স্থিত হওয়া যুদ্ধবিরতিও ভেঙে যেতে পারে। জীবনহানির পরপরই কাতারের দোহায় হওয়া ওই সাময়িক সমঝোতার বাস্তবতা এখন পুরোপুরি তালেবানের আচরণে বিন্যস্ত বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।
প্রধান বক্তব্য :
- পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ বলেছেন, যুদ্ধবিরতি বজায় থাকবে কি না তা নির্ভর করছে কেবল এক শর্তের ওপর — তালেবান কি তাদের ভূখণ্ডে থাকা সন্ত্রাসীদের সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালানো থেকে বিরত রাখতে পারছে কি না।
- তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তান থেকে কোনো হামলা বা অনুপ্রবেশ ঘটলেই সেটি চুক্তিভঙ্গ হিসেবে গণ্য হবে।
ঘটনার পটভূমি ও সাম্প্রতিক উত্তেজনা :
- সীমান্তে কয়েক দিনের ধারাবাহিক সংঘর্ষ ও ব্যাপক প্রাণহানির পর ইসলামাবাদ ও কাবুল দোহায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। ২০২১ সালের পরে এটিই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের সহিংসতা।
- পাকিস্তান অভিযোগ করে, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও অন্যান্য সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আফগান ভূমি থেকে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে এবং এসব কাজে তারা তালেবানের ‘মৌন সমর্থন’ পায়—তবে কাবুল তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
- ইসলামাবাদ বলেছে, ন্যস্ত থাকা অবস্থায়ও তারা আক্রমণমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে—উল্লেখ করা হয়েছে, ৯ অক্টোবর কাবুলে টিটিপির নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে হত্যা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছিল; পরে মেহসুদ ভিডিও বার্তায় জীবিত থাকার দাবি করেন।
তালেবান ও কাবুলের প্রতিক্রিয়া :
- আফগান তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে দাবী এসেছে— তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলার জন্য কোনো গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে না। কাবুলionista বলেন ইসলামাবাদ ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে ও নিজেদের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসীদের লালন করছে—এই অভিযোগ অগ্রাহ্য।
- দোহা বৈঠকে তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতাপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে না এবং পাকিস্তানবিরোধী কোনো গোষ্ঠীকে সমর্থন করবে না—এই ধরনেই সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা ও আগাম পদক্ষেপ :
- যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য তুরস্কে (ইস্তাম্বুল) পরবর্তী বৈঠক নির্ধারিত রয়েছে—আয়োজনের তারিখ বলা হয়েছে ২৫ অক্টোবর। পঞ্চাশপানে কাতার ও তুরস্কসহ আরও অংশীদার সময়ভিত্তিক সমঝোতা পর্যবেক্ষণে যুক্ত।
মানবিক ও নিরাপত্তা মূল্যায়ন :
- পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্র বলেছে, চলতি বছরে সন্ত্রাসী হামলায় ৩১১ জন সেনাসদস্যসহ মোট ৫০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন; বেশিরভাগ আক্রান্ত টিটিপি-র হামলায়।
- জাতিসংঘের পরিসংখ্যান ও অন্যান্য রিপোর্টও ইঙ্গিত করে, আফগান ভূখণ্ডে টিটিপি-র উপস্থিতি লক্ষণীয় এবং তারা ন্যাটো যুগে ছেঁড়া অস্ত্র-সরঞ্জাম ব্যবহার করছে—এই পরিস্থিতিই সীমান্তীয় অনিশ্চয়তা বাড়ায়।
তুলনা ও প্রভাব :
- পাকিস্তান চাইছে—যদি তালেবান তাদের নিয়ন্ত্রণ পুরোদমে প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, তাহলে ইসলামাবাদ কড়া প্রতিক্রিয়া চালিয়ে যেতে বাধ্য হবে; অন্যথায় দোহায় ঘটানো ঐতিহ্যবাহী সমঝোতা অচল হয়ে যেতে পারে।
- যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেলে উপসাগরীয় ও দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়বে—শরণার্থী সমস্যা, সীমান্ত সংঘাতে বর্ধিত ক্ষতি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ভাবনা জড়িত।