October 27, 2025, 7:36 pm
Headline :

পাকিস্তান–আফগানিস্তান সংঘাত, সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে

পাকিস্তান–আফগানিস্তান সংঘাত, সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দুই প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্র—পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা এখন সরাসরি সামরিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে। সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলায় ইতিমধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, আর উভয় দেশই যুদ্ধের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই সংঘাত যদি কূটনৈতিকভাবে সমাধান না হয়, তবে তা পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

সীমান্তে গুলি বিনিময় ও প্রতিশোধের দাবী

শনিবার (১১ অক্টোবর) গভীর রাতে আফগান সেনারা পাকিস্তানের সীমান্ত চৌকিতে গুলি চালায়। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, সপ্তাহের শুরুর দিকে পাকিস্তানের বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই এই আক্রমণ। পাকিস্তান অবশ্য বলছে, আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবান ও তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এ হামলা ও পাল্টা হামলার পর এখন দুই দেশের সেনারা সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।

সামরিক সক্ষমতার তুলনা

২০২৫ সালের গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, সামরিক শক্তিতে পাকিস্তান অনেক এগিয়ে।
পাকিস্তান ১৪৫ দেশের মধ্যে ১২তম স্থানে, আর, আফগানিস্তান রয়েছে ১১৮তম স্থানে।

পাকিস্তানের সামরিক পরিসংখ্যান:
জনসংখ্যা: প্রায় ২৫ কোটি

মোট সামরিক সদস্য: ১৭ লাখ

অ্যাক্টিভ সৈন্য: ৬ লাখ ৫৪ হাজার

রিজার্ভ: ৫ লাখ ৫০ হাজার

প্যারামিলিটারি: ৫ লাখ

বিমান শক্তি:

যুদ্ধবিমান: ৩২৮টি

হেলিকপ্টার: ৩৭৩টি

অ্যাটাক হেলিকপ্টার: ৫৭টি

আফগানিস্তানের সামরিক পরিসংখ্যান:

জনসংখ্যা: প্রায় ৪ কোটি

মোট সামরিক সদস্য: ৪০ হাজার, যারা মূলত প্যারামিলিটারি বাহিনীর সদস্য।

বিমান শক্তি:

মোট এয়ারক্রাফট: ৯টি

হেলিকপ্টার: ৬টি (এর মধ্যে অ্যাটাক হেলিকপ্টার ১টি)

যুদ্ধবিমান: নেই

তুলনামূলকভাবে পাকিস্তান শুধু আকাশে নয়, স্থল ও নৌ—সবক্ষেত্রেই আফগানিস্তানের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী।

রাজনৈতিক বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে দেশটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি রাশিয়া তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিলেও পশ্চিমা বিশ্ব এখনো সেই পথে হাঁটেনি। অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্যাভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ—সব মিলিয়ে আফগানিস্তান এখন এক গভীর মানবিক সঙ্কটে।

অন্যদিকে পাকিস্তান দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়েও সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামোয় স্থিতিশীলতা ধরে রেখেছে। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা ও কাশ্মীর ইস্যুতে কয়েক দশকের অভিজ্ঞতায় দেশটির সেনাবাহিনী আঞ্চলিকভাবে অন্যতম শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে পরিচিত।

দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের সম্ভাব্য প্রভাব

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, পাকিস্তান–আফগানিস্তান সংঘাত যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে এর প্রভাব দুই দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মারাত্মক আঘাত হানবে। সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে, জ্বালানি ও খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হবে, এবং আশ্রয়প্রার্থী ও উদ্বাস্তু সংকট আরও বাড়বে।

দুই দেশেরই সীমান্তে বসবাসরত লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা এখন অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাতের সমাধান শুধু সামরিক নয়—বরং তা নির্ভর করছে কূটনৈতিক সংলাপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর।

উপসংহার

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান—দুই দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ, সংস্কৃতি ও ইতিহাসে ঘনিষ্ঠ। তবু সীমান্তের বুলেট ও পারস্পরিক অবিশ্বাস তাদের সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি দ্রুত সংলাপ শুরু না হয়, তবে এই সংঘাত কেবল দুই দেশের সীমান্তেই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ভারসাম্যকেই নড়বড়ে করে দিতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page