আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তির আওতায় অনেক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হলেও সেই তালিকায় নেই শিশু বিশেষজ্ঞ ও কামাল আদওয়ান হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়া। একইভাবে উপেক্ষিত হচ্ছেন ডা. মারওয়ান আল-হামস, যিনি হামাস নিয়োগপ্রাপ্ত ফিল্ড হাসপাতালগুলোর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ডা. আবু সাফিয়াকে ইসরাইলি বাহিনী আটক করে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, গাজার উত্তরাঞ্চলের কামাল আদওয়ান হাসপাতালের ওপর চালানো এক অভিযানের সময়। তখন প্রায় ২৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করে, হাসপাতালটি হামাসের কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, কোনো বিচার ছাড়াই এভাবে একজন চিকিৎসককে আটক রাখা চরম অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংগঠনগুলোও এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
একজন চিকিৎসকের সাহস ও মানবিকতা যুদ্ধের ভয়াবহতার মাঝেও শিশুদের চিকিৎসা দিতে পিছপা হননি ডা. আবু সাফিয়া। গোলাবর্ষণ ও অবরোধের মধ্যে থেকে তিনি নিরলসভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে গেছেন। তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নেদারল্যান্ডসের চিকিৎসক সংগঠন Doctors for Gaza in the Netherlands তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেয়। যদিও শেষপর্যন্ত তিনি পুরস্কার পাননি, কিন্তু বিশ্বজুড়ে মানবতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
অমানবিক পরিবেশে বন্দি, শারীরিক অবস্থার অবনতি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, ডা. আবু সাফিয়া ‘হামাসের সদস্য’—তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়নি বা বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি।
তার আইনজীবী জানান, বন্দিদশায় তার শারীরিক অবস্থা মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটেছে। তিনি এখন পর্যন্ত ৩০ কেজি ওজন হারিয়েছেন। তেমান কারাগারে কথিত ‘জিজ্ঞাসাবাদের’ নামে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এরপর ওফার কারাগারে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছে তাকে, যেখানে তিনি স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং একাকী একটি সেলে রাখা হয়েছে।
এছাড়াও, উচ্চ রক্তচাপ ও বোমার স্প্লিন্টার থেকে সৃষ্ট ত্বকের জটিলতা তার শারীরিক অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলেছে বলে জানান আইনজীবী।
তালিকাভুক্ত না করায় ক্ষোভ একটি সূত্র সিএনএনকে জানায়, চলমান যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের আলোচনায় ডা. আবু সাফিয়ার মতো প্রতীকী ও মানবিক চরিত্রের স্থান না পাওয়ায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই মনে করছেন, চিকিৎসকদের মতো নিরপেক্ষ ও মানবসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের আটকে রাখা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের শামিল।
প্রেক্ষাপট :
এই ঘটনা ইসরাইল-গাজা সংঘাতের জটিল মানবিক দিকগুলো আবারও সামনে এনে দিয়েছে। ডা. হুসাম আবু সাফিয়ার মুক্তির দাবি শুধু একটি ব্যক্তির নয়—এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে মানবতার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবি।