মো. জোনাব আলী
রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মেগা টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগে প্রায় ৩০ লাখ টিকা সরবরাহ করবে, যার মধ্যে ২০ লাখ টিকা প্রয়োগ হবে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায়।
রংপুর জেলার নয়টি উপজেলায় ইতিমধ্যেই ১,৬৭,০০০ গরুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। পীরগাছা, কাউনিয়া, রংপুর সদর, মিঠাপুকুর, গংগাচড়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও পীরগঞ্জে টিকাদান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৩২টি মেডিক্যাল টিম মাঠ পর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ২৬,৪০০ গরুতে টিকা প্রয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।
আক্রান্ত এলাকায় উঠান বৈঠক, পথসভা, মাইকিং, লিফলেট বিতরণ এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায়সহ সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ওয়ান হেলথ কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ পরামর্শ দিচ্ছে: অসুস্থ পশু জবাই না করা, মৃত পশু খোলা স্থানে বা পানিতে না ফেলা, বরং মাটিচাপা দেওয়া এবং যেকোনো অসুস্থতার ক্ষেত্রে দ্রুত ভেটেরিনারি হাসপাতাল বা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা।
নমুনা পরীক্ষায় কিছু মাংস পজেটিভ পাওয়া গেলেও স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন:
মিঠাপুকুরের সেরুডাঙ্গায় জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে আহত ২
রংপুরে বেসরকারি হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, আন্ডার মেট্রিক ডাক্তার আটক
রংপুরে অ্যানথ্রাক্সের অর্ধশত মানুষ আক্রান্ত, দুই শতাধিক গরুর মৃত্যু
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গবাদিপশুর তড়কা রোগ প্রতিরোধে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করেছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে আক্রান্ত এলাকা পর্যবেক্ষণ, অসুস্থ পশু জবাই প্রতিরোধ এবং খামারের প্রতিটি পশুকে টিকার আওতায় আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ওয়ান হেলথ” কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করছেন-অসুস্থ পশু জবাই না করা, মৃত পশুকে খোলা স্থানে বা পানিতে না ফেলা, বরং গভীরভাবে মাটিচাপা দেওয়া এবং যেকোনো পশুজনিত অসুস্থতার ক্ষেত্রে দ্রুত নিকটস্থ ভেটেরিনারি হাসপাতাল বা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাকে অ্যানথ্রাক্সে বেশি আক্রান্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
রক্তের ১১টি নমুনা পরীক্ষায় সবগুলো নেগেটিভ পাওয়া গেলেও সংগৃহীত ১১টি মাংসের নমুনার মধ্যে ১০টি পজেটিভ পাওয়া গেছে। এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। টিমটি আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করবে।
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জনপ্রতিনিধি ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।