আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ব্রাজিলে সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর সাধারণ ক্ষমা (অ্যামনেস্টি) না দেওয়ার দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভে নেমেছেন লাখো মানুষ। সম্প্রতি অভ্যুত্থান চেষ্টার দায়ে ২৭ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া এ ডানপন্থী নেতা আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে হেরে যাওয়ার পর ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন বলসোনারো। তার পরিকল্পনায় ছিল প্রেসিডেন্ট লুলা, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরালদো আলকমিন ও সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারককে হত্যার চেষ্টা। এসব অপরাধের দায়েই চলতি মাসে আদালত তাকে দীর্ঘ কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
রোববার দেশজুড়ে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। রিও ডি জেনেইরোর বিখ্যাত কপাকাবানা সৈকত, সাও পাওলো, ব্রাসিলিয়া ও অন্যান্য শহরে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে মানুষ স্লোগান তোলে—“সেম আনিস্তিয়া” (কোনো ক্ষমা নয়)।
এই গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন দেশটির নামকরা শিল্পী ও সংগীতশিল্পীরা। কায়েতানো ভেলোসো, চিকো বুয়ারকে ও জিলবার্তো জিলসহ ১৯৬৪-৮৫ সালের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রবীণ শিল্পীরাও ছিলেন অগ্রভাগে। ভেলোসো বলেন, “আমরা জনগণ হিসেবে কখনোই সাধারণ ক্ষমা মেনে নেব না। বলসোনারোর অপরাধের দায় তাকে পেতেই হবে।”
বিক্ষোভকারীরা সংসদের নিম্নকক্ষে সম্প্রতি পাস হওয়া বিতর্কিত একটি খসড়া আইনের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সমালোচকদের মতে, ওই আইনের ফলে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা বা গ্রেপ্তার করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় কংগ্রেস ও সুপ্রিম কোর্ট ভবনের সামনে জনসমুদ্র গড়ে ওঠে—যে স্থানেই ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারির অভ্যুত্থানচেষ্টায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছিল বলসোনারোর সমর্থকরা। বর্তমানে তিনি সেখানেই গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন।
বিক্ষোভ কেবল ব্রাজিলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বার্লিন, লিসবন ও লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরে প্রবাসী ব্রাজিলিয়ানরাও একই দাবিতে সমাবেশ করেছেন। লন্ডনে সংসদ ভবনের সামনে প্রবাসীরা বলসোনারোর দণ্ডাদেশ কার্যকরের দাবি জানান।
অভিনয়শিল্পীরাও আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। নারকোস সিরিজখ্যাত অভিনেতা ওয়াগনার মৌরা সালভাদরে সমাবেশে বলেন, “গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক, ব্রাজিল দীর্ঘজীবী হোক!” স্থানীয় শিল্পী ফারনান্দা তাকাই বলেন, “আমাদের স্পষ্টভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করতে হবে, না হলে রাজনীতিবিদরা সবসময় দায় এড়াবে।”
এদিকে কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী চিকো বুয়ারকে ১৯৭৯ সালের সাধারণ ক্ষমার উদাহরণ টেনে বলেন, “সেই সময় সামরিক শাসনের অপরাধীরা শাস্তি থেকে বেঁচে গিয়েছিল। আমরা কোনোভাবেই আবার সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি চাই না।”