আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত উদ্ভাবনী শক্তি অর্জন করেছে। হেফেই শহরে মাত্র দুই বছর আগে পারমাণবিক গবেষণাগার থেকে গড়ে ওঠা ফিউশন এনার্জি টেক প্রতিষ্ঠানটি এই অগ্রগতির উদাহরণ। প্রতিষ্ঠানটি পারমাণবিক সংযোজন (ফিউশন) থেকে উদ্ভূত প্লাজমা প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার ঘোষণা দিয়েছে, যা সূর্যের চেয়েও তীব্র তাপ উৎপন্ন করতে সক্ষম।
এই প্রযুক্তির ভিত্তিতে তারা ইতিমধ্যে একটি নিরাপত্তা স্ক্রিনিং ডিভাইস তৈরি করেছে, যা স্থানীয় মেট্রো স্টেশনে প্রতিদিন হাজারো যাত্রীর পাশ দিয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চীনের সর্বোচ্চ নেতা শি জিনপিং পশ্চিমা দেশগুলোকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পেছনে ফেলে দেওয়ার প্রতি মনোনিবেশ করেছেন। বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভিএস), লিথিয়াম ব্যাটারি, মানুষের মতো রোবট নির্মাণ—চীনা কোম্পানিগুলো এই খাতগুলোতে ইতিমধ্যেই নেতৃত্ব দখল করেছে।
চীনের উদ্ভাবনী শক্তির পেছনে মূল কারণ হলো রাষ্ট্র-সমর্থিত উদ্ভাবন শৃঙ্খল। সরকারি গবেষণাগার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবিত ধারণাগুলোকে দ্রুত বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে রূপান্তর করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, চোংকিং ভিত্তিক থিসিউস কোম্পানি ২০১৯ সালে কয়েকজন বিজ্ঞানীর ছোট দল হিসেবে শুরু করলেও ২০২৪ সালের মধ্যে জাতীয়ভাবে খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ায় সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি খাত একসাথে কাজ করছে। উদাহরণস্বরূপ, হারবিনের হেইলংজিয়াং অ্যাকাডেমি অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস তাদের জেনেটিকালি মডিফায়েড সয়াবিন পেটেন্ট নিলামে তুলেছে, এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তি ক্রয় ও ব্যবহার করছে।
চীনের উদ্ভাবন কৌশল অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে উদ্ভাবনী পণ্য বিক্রি, যৌথ প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং পরামর্শ সেবার আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ২০৫ বিলিয়ন ইউয়ান (২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এ পৌঁছেছে।
হেফেই শহর উদ্ভাবনী সহযোগিতার সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ। এখানে সরকার বেসরকারি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছে, গবেষণাগার ও বিশ্ববিদ্যালয়কে সংযুক্ত করছে এবং সাপ্লাই চেইন তৈরি করছে। ফিউশন এনার্জি টেকের প্লাজমা ক্যান্সার চিকিৎসা এবং কোয়ান্টাম-সুরক্ষিত মোবাইল সেবা ইতিমধ্যেই বাজারে এসেছে।
তবে এই মডেলের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অতিরিক্ত উৎপাদন, সীমিত বাজার চাহিদা এবং অর্থায়নের কারণে চীনের ঋণ বর্ধিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে জনসাধারণের ঋণ জিডিপির ১২৪ শতাংশ পৌঁছেছে, যার মধ্যে স্থানীয় সরকারের প্রকল্পও অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনের উদ্ভাবন কনভেয়র বেল্ট স্বল্পমেয়াদে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান তৈরি করলেও দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ রিটার্ন ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে এটি অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে।