নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুরে নিজের মাকে শ্বাসরোধে হত্যা করার দায়ে মো. জামিল মিয়া ভেলন (৩২) নামের এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলে খোদা মো. নাজির এ রায় ঘোষণা করেন। আসামি জামিল মিয়া রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নাজিরদহ গ্রামের মৃত জামিলা বেগমের একমাত্র ছেলে।
মামলার এজাহারে জানা যায়, জামিল মিয়ার স্ত্রী কাকলী খাতুনের সঙ্গে তার মা জামিলা বেগমের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল। একপর্যায়ে স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য চরমে পৌঁছালে কাকলী খাতুন বাবার বাড়িতে চলে যান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জামিল মায়ের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।
২০২২ সালের ১৯ আগস্ট রাতে, খাবার খেয়ে মা-ছেলে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক ১টার দিকে জামিল ঘুমন্ত অবস্থায় তার মাকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে ঘরের মেঝেতে গর্ত খুঁড়ে মায়ের মরদেহ গোপনে পুঁতে রাখেন।
পরদিন প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের তিনি জানান, তার মা কোথায় গেছেন, জানেন না। কিন্তু কয়েক দিন পর ঘর থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে স্থানীয়রা মাটি খুঁড়ে জামিলা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করেন।
এরপর নিহতের ভাই মো. ছামসুল হক বাদী হয়ে কাউনিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ জামিল মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আফতাব উদ্দিন, আর আসামিপক্ষে ছিলেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. শামীম আল মামুন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আসামির দোষ প্রমাণিত বলে রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেন—একজন মা সন্তানের জীবনের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেন, সেই সন্তানের হাতে মায়ের মৃত্যু সমাজে সবচেয়ে ঘৃণ্য অপরাধের উদাহরণ। এ ধরনের হত্যার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া বিকল্প কিছু হতে পারে না।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, এই রায়ে মানবিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ রক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো। আদালত প্রমাণের ভিত্তিতে সঠিক বিচার দিয়েছেন।”
রংপুর জেলা পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন, মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেছি। আদালতের রায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
এই রায়ের মধ্য দিয়ে আবারও প্রতিফলিত হলো—পরিবারের ভেতরে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকল্প কিছু নেই। জন্মদাত্রী মায়ের জীবন কেড়ে নেওয়া শুধু অপরাধ নয়, এটি এক অমানবিক পাপ, যার শাস্তি অনিবার্য।