অনলাইন ডেস্ক
মোটা অঙ্কের পুরস্কার জয়ের আশায় এক টেবিলে বসেছিলেন সেলিব্রেটি, পেশাদার ক্রীড়াবিদ ও ধনী জুয়াড়িরা। পোকারের তাসে ভাগ্য আজমাতে গিয়ে তারা জানতেন না—খেলাটি শুরু হওয়ার আগেই তারা হেরে গেছেন। এটি কোনো সিনেমা নয়। বাস্তবের এমন প্রতারণা, যা হার মানাবে হলিউডের ব্লকবাস্টার ওশানস এলেভেনকেও।
মার্কিন ফেডারেল তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, মাফিয়া পরিচালিত এক জটিল প্রতারণা চক্র ধনী খেলোয়াড়দের টার্গেট করেছিল। তাদের বলা হতো “ফিশ”—অর্থাৎ সহজ শিকার। প্রতারণায় ব্যবহৃত হয় এক্স-রে কার্ড টেবিল, গোপন ক্যামেরা, লুকানো বিশ্লেষক যন্ত্র এবং এমন সানগ্লাস ও কনট্যাক্ট লেন্স যা প্রতিপক্ষের কার্ড পর্যন্ত দেখতে পারত।
এই প্রযুক্তিনির্ভর ফাঁদে পড়ে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় অন্তত ৭ মিলিয়ন ডলার—বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৫ কোটি টাকারও বেশি। প্রত্যেক ভুক্তভোগীর গড় ক্ষতি প্রায় ২১ কোটি ৯ লাখ টাকা।
যুক্তরাষ্ট্রের বনানো, গ্যাম্বিনো, লুচেসে ও জেনোভিজ—এই চার কুখ্যাত মাফিয়া পরিবার পরিচালনা করছিল আন্ডারগ্রাউন্ড পোকার স্কিমটি। তাদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল সাবেক পেশাদার ক্রীড়াবিদদের, যাতে তাদের উপস্থিতি ধনীদের প্রলুব্ধ করে টেবিলে টেনে আনে।
প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, সাবেক এনবিএ খেলোয়াড় ডেমন জোন্স ও পোর্টল্যান্ড ট্রেইল ব্লেজার্সের কোচ চ্যান্সি বিলাপস ছিলেন এই প্রতারণার অংশ।
প্রযুক্তির জাদুতে সাজানো ফাঁদ
প্রতারণার কাঠামো ছিল হলিউড সিনেমার মতোই জটিল।
টেবিলের নিচে ছিল এক্স-রে সেন্সর, যা প্রতিটি কার্ড পড়ত।
চিপ ট্রের ভেতরে থাকত মাইক্রো বিশ্লেষক যন্ত্র।
রিগ করা শাফলিং মেশিন কার্ডের ক্রম নির্ধারণ করত।
বিশেষ কনট্যাক্ট লেন্স পরা খেলোয়াড়রা অন্যদের কার্ডও ‘পড়তে’ পারত।
লাইট ফিক্সচারে গোপন ক্যামেরা খেলোয়াড়দের চালচলন নজরদারি করত।
সব তথ্য পাঠানো হতো এক দূরবর্তী “অপারেটরের” কাছে, যিনি তা ফেরত পাঠাতেন টেবিলের “কোয়ার্টারব্যাক” বা “ড্রাইভার”-এর কাছে। তিনি গোপনে সংকেত দিয়ে খেলাটি নিয়ন্ত্রণ করতেন।
প্রতিটি গেম শেষে খেলোয়াড়দের ক্ষতি হতো কয়েক লাখ ডলার পর্যন্ত। অর্জিত অর্থ পাঠানো হতো ক্রিপ্টোকারেন্সি ও শেল কোম্পানির মাধ্যমে। এর বড় অংশ চলে যেত ইতালীয় অপরাধ পরিবারের তহবিলে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ফেডারেল তদন্তের পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিযান চালিয়ে ৩০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এফবিআই পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল বলেন, এই স্কিম এমন এক স্তরের প্রতারণা, যা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ধ্বংস ডেকে এনেছে—খ্যাতি ও অর্থলোভে কেউ কেউ হয়ে উঠেছেন মাফিয়ার অর্থের যোগানদাতা।
পোর্টল্যান্ড কোচ বিলাপসকে গ্রেপ্তারের পর এনবিএ কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটিতে পাঠিয়েছে। মায়ামি হিট খেলোয়াড় টেরি রোজিয়ার ও সাবেক এনবিএ তারকা জোন্স-এর বিরুদ্ধেও ওয়্যার ফ্রড ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই পোকার স্কিমে প্রযুক্তি, প্রভাব ও অপরাধের এমন সংমিশ্রণ দেখা গেছে যা সিনেমাকেও হার মানায়। ফেডারেল কর্তৃপক্ষের ভাষায়— এটি কেবল জুয়ার প্রতারণা নয়, এটি প্রযুক্তি ও লোভের যুগল ষড়যন্ত্র।”
সূত্র: বিবিসি বাংলা