নিজস্ব প্রতিবেদক
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষার আগের রাতে জেলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসারের (আরএমও) বাসায় চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই সময়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, শুক্রবার সকালবেলায় ২৫–৩০ জন প্রার্থী একসঙ্গে আরএমও ডা. মোহাম্মদ হোসেন ইমামের বাসা থেকে বের হচ্ছেন। স্থানীয় সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হলে অনেকে তড়িঘড়ি করে স্থান ত্যাগ করেন। আগের রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে কয়েকজনকে ওই বাসায় ঢুকতে দেখা যায় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চাকরিপ্রার্থীদের একটি দলকে গোপনে আরএমও’র বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে ঘুষের বিনিময়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে তাদের মুখস্থ করানো হয় এবং প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা নেওয়া হয়, যাতে পরদিন অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় তারা সহজে পাস করতে পারেন।
জানাগেছে, কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীনে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির মোট ১১৫টি পদে নিয়োগের জন্য প্রায় ১,৬০০ আবেদন জমা পড়ে। শুক্রবার সকাল ১০টায় জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
ভিডিও ভাইরাল, ক্ষোভ ছড়াল জেলাজুড়ে, ঘটনার পর সাংবাদিকরা ভোরে আরএমও’র বাসার সামনে অবস্থান নেন। এসময় উপস্থিত চাকরিপ্রার্থীরা সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখেই দৌড়ে পালিয়ে যান। ভিডিওটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
এই ঘটনায় ‘সচেতন নাগরিকদের উদ্যোগে’ ও চাকরিপ্রার্থীদের ব্যানারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি—ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি ও নিয়োগ পরীক্ষার পুনঃআয়োজন।
আরএমও’র দাবি: “অভিযোগ ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে” অভিযুক্ত আরএমও ডা. মোহাম্মদ হোসেন ইমাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ফ্ল্যাটের দ্বিতীয় তলায় থাকি। অন্য ফ্লোরগুলো ছাত্রীনিবাস হিসেবে ভাড়া দেওয়া। সেখানে কে আসে বা যায়, আমি খোঁজ রাখি না। প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে আমার কোনো তথ্য নেই। প্রমাণ পাওয়া গেলে যা শাস্তি হবে, তা মেনে নেব।”
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, “ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখার পর বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে, সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, “আরএমও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত নন। তবে অভিযোগের বিষয়টি যাচাইয়ে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”