আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরাইল ২৫০ জন দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি ছাড়াও গাজা থেকে আটক করা প্রায় ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে। এদের অধিকাংশকেই যুদ্ধ চলাকালে বিচার ছাড়াই আটক রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) টাইমস অব ইসরাইল-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মুক্তি পাওয়া এই ব্যক্তিদের কেউই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা আদালতের মুখোমুখি হননি। অনেককে দীর্ঘ মাস নিঃসঙ্গ অবস্থায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের দাবি, আটকরা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, গাজায় নির্বিচারে অভিযান চালিয়ে অনেক সাধারণ মানুষকেও ধরে নিয়ে গেছে ইসরাইলি বাহিনী। তাদের মধ্যে অনেকে হাসপাতালে, স্কুলে কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকালে আটক হয়েছিলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর ‘অবৈধ যোদ্ধা আটক আইন’-এর আওতায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত হাজারো গাজাবাসীকে আটক করে। ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই আইনে বন্দির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৭৩।

মানবাধিকার সংগঠন হামোকেদ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের ছয় মাস মেয়াদে আটকাদেশ দেওয়া হয়, যা নিয়মিত নবায়ন করা হয়। এসব শুনানি মাত্র পাঁচ থেকে দশ মিনিটের ভিডিও কনফারেন্সে সম্পন্ন হয়। অধিকাংশ বন্দিই জানতেন না কেন তাদের আটক করা হয়েছে; তাদের কোনো আইনজীবীর সঙ্গে দেখা বা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগও দেওয়া হয়নি।
মুক্তি পাওয়া বহু বন্দি জানিয়েছেন, ইসরাইলি কারাগারে তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
একজন ২৩ বছর বয়সী ট্রাকচালক বলেন, “আমাকে হামাসের সদস্য হিসেবে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়। পরে ৪৫ দিন ‘ডিস্কো রুমে’ রাখা হয়, যেখানে ঘুমাতে দেওয়া হতো না এবং প্রচণ্ড শব্দে গান বাজানো হতো।”
আরেকজন বন্দি জানান, খান ইউনুস থেকে আটক করে তাকে ৯৬ দিন চোখ বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়। ঘুমানোর সময় বা বাথরুমে যাওয়ার সময়ও হাতকড়া খোলা হতো না।
হামোকেদ অন্তত ১২ জন গাজাবন্দির কাছ থেকে একই ধরনের নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক জেসিকা মন্টেল বলেন, “আমরা মাত্র ৫০ জন বন্দির আইনজীবী সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে পেরেছি—এটাই পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝায়।”

ইসরাইলি সেনাবাহিনী ও কারা কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে, তিনি ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর কঠোর নীতিমালা আরোপ করেছেন।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্দে তেইমান আটক কেন্দ্রে এক রিজার্ভ সেনাকে বন্দিদের মারধরের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। একই মাসে আরও পাঁচজন সেনার বিরুদ্ধে এক ফিলিস্তিনি বন্দিকে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষ্যে—ইসরাইলি কারাগারগুলো এখন যেন “আধুনিক যুগের মধ্যযুগীয় নির্যাতনকেন্দ্র”, যেখানে বিচার ছাড়াই হাজারো ফিলিস্তিনি বছরের পর বছর বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।