আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে চলমান সীমান্ত উত্তেজনা আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। খাইবার পাখতুনখোয়ার কুররম জেলার সীমান্তে মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া তীব্র সংঘর্ষে অন্তত ৪টি সীমান্ত পোস্ট ও ৬টি ট্যাংক ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। আফগান সেনা ও টিটিপির যৌথ হামলা, পালটা জবাব পাকিস্তানের জিও নিউজের খবরে জানানো হয়, আফগান সেনাবাহিনী ও পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) যৌথভাবে কুররম সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর হামলা চালায়। পাকিস্তান একে ‘বিনা উসকানিতে সশস্ত্র আগ্রাসন’ বলে উল্লেখ করেছে। পালটা হামলায় পাকিস্তান খোস্ট প্রদেশের শামশাদ সেনাপোস্ট, এরপর নার্গসার, তুর্কমানজাই ও পোলসেন সেনাপোস্টে হামলা চালায়, যেখানে টিটিপি ক্যাম্প ধ্বংসেরও দাবি করেছে পাক বাহিনী।
ধ্বংসের বিবরণ: পোস্ট ও ট্যাংক উড়িয়ে দেওয়ার দাবি শামশাদ পোস্ট: ধ্বংসের পর আফগান ও টিটিপি যোদ্ধাদের মধ্যে কয়েকজন নিহত হন, বাকিরা পালিয়ে যান। নার্গসার পোস্ট: ট্যাংক মোতায়েন করা ছিল, পাকিস্তান এখানে ৪টি ট্যাংক ধ্বংস করার কথা জানিয়েছে। তুর্কমানজাই পোস্ট: এখানে ষষ্ঠ ট্যাংকটি ধ্বংস করা হয়। পোলসেন পোস্ট: পাশেই ছিল একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যা পাকিস্তান ধ্বংস করেছে বলে দাবি। পাকিস্তানের সেনা সূত্র জানায়, এক পর্যায়ে আফগান সেনারা আত্মসমর্পণের সাদা পতাকা তোলে এবং পোস্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়।
পূর্ববর্তী সংঘর্ষের ধারাবাহিকতা১১ অক্টোবরেও দুই দেশের মধ্যে তীব্র লড়াই হয়। তখন আফগান সেনারা পাকিস্তানের আঙ্গুর আড্ডা, বাজাউর, দির, চিত্রালসহ বিভিন্ন সীমান্তে হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তান তীব্র পালটা হামলা চালায়, যাতে প্রায় ২০০ জন আফগান সেনা নিহত পাকিস্তানের ২৩ সেনা প্রাণ হারান, এমন দাবি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আইএসপিআরের। বিমান হামলা ও টিটিপি নেতার মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জন এই উত্তেজনার সূচনা ৯ অক্টোবর রাতের বিমান হামলায়। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে টিটিপি নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় পাকিস্তান।
অভিযোগ, টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেসুদ এবং তার ডেপুটি ক্বারী সাইফুল্লাহ মেসুদ নিহত হয়েছেন। যদিও বিষয়টি এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। আফগান প্রতিক্রিয়া: সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ আফগান তালেবান সরকার বলছে, ৯ অক্টোবরের হামলা ছিল তাদের দেশের সার্বভৌমত্বে সরাসরি হস্তক্ষেপ। এই ঘটনার জবাব দিতেই ১১ অক্টোবর হামলা চালায় তারা। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল সীমান্তের দুই পাশে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান উভয়ই বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। বিশ্লেষকদের মতে, টিটিপিকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা আস্থার অভাব আরও বাড়ছে।
উপসংহার :
সীমান্তে ক্রমাগত পাল্টাপাল্টি হামলার ফলে শুধু দুই দেশের সম্পর্ক নয়, পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানালেও, পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত আবারও রক্তাক্ত অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে।