নিজস্ব প্রতিবেদক
বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধি ও ন্যায্য বেতন কাঠামোর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেছেন, রাস্তায় ফেলে শিক্ষককে মারধর করা কোনো সভ্য রাষ্ট্র বা সভ্য সরকারের কাজ হতে পারে না।
রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
“যাদের গ্রেফতার করেছেন, সূর্য ডোবার আগেই ছেড়ে দিন”
হাসনাত বলেন, “রাস্তায় ফেলে শিক্ষককে মারবেন— এটা কি কোনো সভ্য রাষ্ট্রের আচরণ হতে পারে? এটা কোনো সভ্য সরকারের কাজ নয়। অবিলম্বে এ হীন কাজের জন্য হামলাকারীদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। আর যেসব শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে, সূর্য ডোবার আগেই তাদের মুক্তি দিতে হবে।”
তিনি বলেন, শিক্ষক সমাজ দেশের মেধার ভিত্তি। অথচ আজ তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক ও মানবিকতার চরম অবমাননা।
“যে শিক্ষক রাষ্ট্র গড়েন, তিনি নিজে বাঁচেন অপমানিত জীবনে”
হাসনাত আব্দুল্লাহ শিক্ষকদের আর্থিক দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলেন, “আমাদের দেশের শিক্ষকরা তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মতো জীবনযাপন করেন। অথচ আমরা আশা করি, তারা প্রথম শ্রেণির নাগরিক তৈরি করে দেশকে গড়ে তুলবেন। একজন শিক্ষক ৩০ বছর চাকরি করে যে বেতন পান, তা দিয়ে এক কেজি ইলিশ মাছও কিনতে পারেন না।”
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “একজন শিক্ষক চাকরি শুরু করেন সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতনে। ৩২ বছর পর তার বেতন হয় ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে এক কেজি ইলিশের দাম ২৮০০ টাকা। অর্থাৎ, তার মাসিক বেতনের প্রায় ১৫ শতাংশ ব্যয় হয় শুধু এক কেজি মাছ কিনতে। এভাবেই তারা বাঁচেন— মাথা নিচু করে, অপমানের বোঝা বয়ে।”
“২৫০০ টাকায় কোথায় বাসা ভাড়া পাওয়া যায়?”
বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির দাবি প্রসঙ্গে হাসনাত বলেন, “একজন শিক্ষকের বাড়িভাড়া ভাতা মাত্র ২০ শতাংশ— অর্থাৎ দুই হাজার পাঁচশ টাকার মতো। ঢাকায় বা মফস্বলে কোথায় এমন বাসা পাওয়া যায়? শিক্ষক যদি বাসা ভাড়া দিতে না পারেন, সংসার চালাতে না পারেন, তাহলে তিনি কীভাবে মেধা গঠনের কাজ করবেন?”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকদের শুধু মুখে মুখে সম্মান দিয়ে লাভ নেই। যেদিন শিক্ষক সম্মানজনক আয় পাবেন, সেদিনই রাষ্ট্রের মান বাড়বে। টাকা ছাড়া যে সম্মান দেওয়া হয়, তা আসলে অপমানেরই আরেক রূপ।”
শিক্ষকদের দাবির প্রতি সংহতি
এ সময় এনসিপির অন্যান্য নেতারাও শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। সভায় বক্তব্য রাখেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্যসচিব ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, “শিক্ষকরা জাতির বিবেক, তাদের সঙ্গে এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষক সমাজের দাবি ন্যায্য এবং অবিলম্বে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।”
প্রেক্ষাপট
সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। ওই কর্মসূচির সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। শিক্ষক নেতারা দাবি করেন, পুলিশ ও কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি তাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়েছে।
এই ঘটনায় সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সরকারের নীরব ভূমিকার সমালোচনা করেন।