আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের সম্ভাব্য মুক্তিকে সামনে রেখে তেলআবিবে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, “জিম্মিরা ঘরে ফিরছেন।” এই প্রক্রিয়ায় গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির উদ্যোগকে সম্ভব করে তোলায় তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন — খবর বিবিসির।
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগ এদিকে যুদ্ধ অবসানের সমঝোতা চূড়ান্ত করতে মিশর শীর্ষ পর্যায়ের এক আন্তর্জাতিক বৈঠকের আয়োজন করেছে, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ প্রায় ২০ জন বিশ্বনেতা অংশ নেবেন।
সোমবার, শার্ম আল-শেখে অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও আল-সিসি যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ইতিমধ্যেই বৈঠকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈঠকের আগে ইসরায়েল সফর করবেন। তার সঙ্গে মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প এবং জামাতা জেয়ার্ড কুশনার শনিবারের তেলআবিব সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন।
জিম্মি মুক্তি ও পরিবারের অপেক্ষা চুক্তি অনুযায়ী, ৪৮ জন জিম্মি মুক্তির তালিকায় রয়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার মধ্যে এই মুক্তির বাস্তবায়ন চাওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এদের মধ্যে ২০ জন জীবিত, বাকিরা মরদেহ হিসেবে ফেরত আসবেন। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ওসামা হামদান জানিয়েছেন, সোমবার সকাল থেকে বন্দি বিনিময়ের কার্যক্রম শুরু হবে।
আভিভ হাভরন, যার পরিবারের ৭ জনকে ৭ অক্টোবর হামাস অপহরণ করেছিল, বিবিসিকে বলেন, “এটা শুধু আমাদের পরিবারের নয়, গোটা কমিউনিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আমরা আমাদের জীবন আবার শুরু করতে পারছি না যতক্ষণ না তারা ফিরে আসে।”
শুলামিট ও ডেভিড গিনাট বলেন, “সব জিম্মিকে ফেরানো দরকার। তারা আমাদের ভাই-বোন। যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে আমাদের ক্ষত উপশম করতে হবে।”
সমাবেশে অংশ নেওয়া অনেকেই “ধন্যবাদ, ট্রাম্প”—এমন স্লোগান দিয়েছেন। গাজায় পরিস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলি বাহিনী গাজার কিছু এলাকা থেকে সরে যাওয়ার পর সেখানে হামাস তাদের যোদ্ধা মোতায়েন করেছে। তবে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। ইতিমধ্যে হামাস ও স্থানীয় কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষের খবর মিলেছে।
এদিকে ঘরহারা ফিলিস্তিনিরা ধীরে ধীরে উত্তর গাজায় ফিরে আসছেন। তারা ফিরে গিয়ে দেখছেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়িঘর।
আইনজীবী মোসা আলদৌস বলেন, “এখানে আর কোনো ঘর নেই, সব শেষ।”
আরেক বাসিন্দা রাজা সালমি বলেন, “আমার জীবনের সব স্মৃতি ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।”
ত্রাণ সহায়তা ও খাদ্য সংকট চুক্তির অংশ হিসেবে গাজায় বর্ধিত ত্রাণ সহায়তার প্রবেশের কথা থাকলেও, বাস্তবতা এখনো আশানুরূপ নয়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, এখনও প্রতিশ্রুতিপূর্ণ সংখ্যায় ত্রাণবাহী লরি গাজায় প্রবেশ করেনি।
তাদের লক্ষ্য, গাজা শহরের ১৪৫টি স্থানে নিয়মিত খাদ্য বিতরণ পুনরায় চালু করা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার ৫০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে জাতিসংঘ বলছে, গাজার প্রায় ৫ লাখ মানুষ বর্তমানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, “যদি কোথাও ক্ষুধা দেখা দেয়, তার দায় সাহায্য সংস্থা ও হামাসের।”