আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারত সফররত আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলন নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে নারীবিদ্বেষী আচরণ এবং ভারতের সরকারের নীরবতা।
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে আফগান দূতাবাসে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে কেবল পুরুষ সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। নারী সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকলেও তাদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রতিবাদ জানানোর পরও কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
বিষয়টি নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নারী অধিকারকর্মীরা সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলের ক্ষোভ
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন,
“আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান কী? নারীর প্রতি সম্মান কি কেবল ভোটের সময়ের স্লোগান?”
তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র লেখেন,
“এ ধরনের বৈষম্যমূলক অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়ে সরকার দেশের নারীদের অপমান করেছে। এটি নীতিহীনতার প্রকাশ।”
কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম বলেন,
“আমি আন্তর্জাতিক বাস্তবতা বুঝি। কিন্তু তালেবানের আদিম ও নারীবিদ্বেষী আচরণকে ভারতীয় মাটিতে মেনে নেওয়া লজ্জাজনক। পুরুষ সাংবাদিকদের উচিত ছিল সম্মেলন বর্জন করা।”
কংগ্রেসের মুখপাত্র শামা রহমানও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন,
“আমন্ত্রণ জানিয়ে যদি বৈষম্যমূলক আচরণকে আমরা মঞ্চ দিই, তাহলে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর লজ্জিত হওয়া উচিত।”
সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া
বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরাও প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
সুহাসিনী হায়দার (দ্য হিন্দু):
“তালেবান তাদের নারীবিদ্বেষ ভারতেও টেনে আনল। এটা কূটনৈতিক বাস্তবতা নয়, আত্মসমর্পণ।”
স্মিতা শর্মা:
“নারী সাংবাদিকদের ডাকাই হয়নি। জয়শঙ্করের ভাষণে বা যৌথ বিবৃতিতে আফগান নারীদের দুর্দশা নিয়ে একটি কথাও নেই। অথচ মুত্তাকিকে লালগালিচা অভ্যর্থনা দেওয়া হলো!”
বিজেতা সিং:
“পুরুষ সাংবাদিকদের উচিত ছিল বৈষম্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বর্জন করা।”
গীতা মোহন সংক্ষেপে মন্তব্য করেন:
“এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
সরকারের অবস্থান—নীরবতা?
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় সরাসরি কোনো নিন্দা জানায়নি। বরং এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে,
“সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন বা ব্যবস্থাপনায় মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা ছিল না।”
তবে সাংবাদিক ও বিশ্লেষকরা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন,
“সরাসরি জড়িত না থাকলেও, ভারত কি তালেবানের এই বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ করেছে? নারীর মর্যাদা রক্ষায় কি সরকার কোনো অবস্থান নিয়েছে?”—এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
তালেবান পতাকা, নারী বর্জন, অথচ বন্ধুত্বের বার্তা
নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পরই আফগান দূতাবাসে ওই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে কোনো দেশের জাতীয় পতাকা না থাকলেও, টেবিলের ওপর ছোট আকারে তালেবান সরকারের পতাকা রাখা হয়।
যদিও ভারত এখনো তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি, তবে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি জানিয়েছেন—
“ভারতের দূতাবাস কাবুলে আবার চালু হচ্ছে এবং নয়াদিল্লির আফগান দূতাবাসেও নতুন কূটনীতিক নিয়োগ দেওয়া হবে।”
এই ঘটনা শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং নারী অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং ভারতের নীতিগত অবস্থান নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারত সরকার, বিশেষ করে নারী সাংবাদিকদের প্রতি এমন বৈষম্যের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট প্রতিবাদ না করায়।