October 27, 2025, 11:49 pm
Headline :

পাকিস্তানে সশস্ত্র সংগঠনে কীভাবে জড়াচ্ছে বাংলাদেশি তরুণরা?

পাকিস্তানে সশস্ত্র সংগঠনে কীভাবে জড়াচ্ছে বাংলাদেশি তরুণরা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর সঙ্গে বাংলাদেশি তরুণদের সম্পৃক্ত হওয়ার খবর সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। গত ছয় মাসে অন্তত দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সামরিক অভিযানে। এছাড়া টিটিপির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ঢাকায় আটক হয়েছেন দুই তরুণ। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন শঙ্কার জন্ম দিয়েছে— বাংলাদেশি তরুণরা কীভাবে ও কোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলোতে জড়িয়ে পড়ছে?

নিহত দুই বাংলাদেশি

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন আহমেদ জুবায়ের, যিনি বাংলাদেশের নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কয়েক মাস পর একই অঞ্চলে আরেক অভিযানে মারা যান মাদারীপুরের ফয়সাল নামের এক তরুণ। তাদের পরিবার এই ঘটনার পর থেকে জনসম্মুখে খুব বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

পুলিশের দাবি: সক্রিয় রিক্রুটিং নেটওয়ার্ক

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়ের করা এক মামলার নথি অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে জনবল সংগ্রহ করে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে পাঠানোর কাজে যুক্ত রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার ইমরান হায়দার নামের এক ব্যক্তি। তার নেতৃত্বেই তরুণদের উদ্বুদ্ধ করে টিটিপির সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত জুলাইয়ে দুই তরুণকে আটক করার পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এই নেটওয়ার্কের কার্যক্রম সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া গেছে।

তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশি তরুণরা সাধারণত প্রথমে সৌদি আরব বা দুবাইয়ে চাকরির নামে যান। সেখান থেকে তাদের পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে পাঠানো হয়। গত এক বছরে অন্তত কয়েকজন বাংলাদেশিকে এভাবে ভিন্ন ভিন্ন রুটে সীমান্ত অতিক্রম করতে দেখা গেছে।

পুরোনো প্রেক্ষাপট ও নতুন বাস্তবতা

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশিদের যোগাযোগ নতুন কিছু নয়। আশির দশকে আফগান যুদ্ধে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে একাধিক তরুণ গিয়েছিলেন। ২০১০ সালের পর দেশে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর ফলে দৃশ্যত নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে যায়। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে— আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখনও কিছু বাংলাদেশি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, “বাংলাদেশে অতীতে খোলাখুলিভাবে মুজাহিদ সংগ্রহ বা রিক্রুটমেন্টের কার্যক্রম চালানো হতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে তা অনেকটা থেমে গেছে। কিন্তু পাকিস্তানে বাংলাদেশিদের নিহত হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করছে— আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই নেটওয়ার্ক এখনও সক্রিয়।”

প্রশাসনের পদক্ষেপ

ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আটক দুই তরুণের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র আইনগত ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তরুণদের বিভ্রান্তিমূলক মতাদর্শ থেকে দূরে রাখার উদ্যোগ আরও জোরদার করতে হবে।

টিটিপি: সংক্ষেপে পরিচিতি

২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান দেশটিতে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সংগঠনটি পাকিস্তানি সেনাদের হত্যা, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ হামলার সঙ্গে জড়িত। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা শুধু স্থানীয় নয়, বিদেশ থেকেও সদস্য সংগ্রহ করছে।

উপসংহার

বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের টিটিপিতে যোগ দেওয়া তরুণদের সাম্প্রতিক মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণ করছে— আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক এখনও সক্রিয়। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, তবুও বিশ্লেষকদের মতে সামাজিক সচেতনতা ও তরুণদের সঠিক পথে উদ্বুদ্ধ করাই হবে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page