October 27, 2025, 9:29 pm
Headline :

লাদাখে রক্তাক্ত বিক্ষোভ: ভারত-চীন উত্তেজনার কেন্দ্রে জেন-জেডদের ক্ষোভ

লাদাখে রক্তাক্ত বিক্ষোভ: ভারত-চীন উত্তেজনার কেন্দ্রে জেন-জেডদের ক্ষোভ

অনলাইন ডেস্ক

হিমালয়ের দুর্গম ও শীতল মরুভূমি অঞ্চল লাদাখ আবারও সহিংসতায় কেঁপে উঠেছে। ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই অঞ্চল বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নতুন এক রক্তাক্ত অধ্যায় দেখল। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে সরে এসে ক্ষুব্ধ তরুণরা সড়কে নেমে এলো। তাদের ক্ষোভ, তাদের হতাশা—সব মিলিয়ে লাদাখের রাজপথ রঞ্জিত হলো রক্তে।

রক্তাক্ত বুধবার

লেহ শহরের রাজপথে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান অন্তত চারজন, আহত হন কয়েক ডজন। আহতদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় বিজেপি কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

আন্দোলনের অন্যতম নেতা শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, দীর্ঘ ছয় বছরের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ আর অনশন কার্যকর না হওয়ায় তরুণদের ধৈর্য ভেঙে গেছে। এবার তারা জেনারেশন-জেডের বিদ্রোহী চেতনায় রাস্তায় নেমেছে।

দাবিগুলো কী?

২০১৯ সালে মোদি সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত এলাকায় ভাগ করে। জম্মু-কাশ্মীরে আইনসভা থাকলেও লাদাখে কোনো নির্বাচিত পরিষদ নেই। এখানকার নাগরিকরা তাই নিজেদের প্রশাসনিক ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত মনে করছেন।

রাজ্যের মর্যাদা ফেরত দেওয়া, ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় সাংবিধানিক সুরক্ষা, সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা ও স্পষ্ট নীতিমালা।

এগুলোই লাদাখের প্রধান দাবি। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর থেকে সরকারি খাতের চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। শিক্ষিত তরুণরা বছরের পর বছর বেকার থেকে ক্ষোভ জমাচ্ছেন। এক জরিপে দেখা গেছে, লাদাখের স্নাতকদের বেকারত্বের হার জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ।

ইতিহাসের রক্তাক্ত অধ্যায়

লাদাখে আগে বিক্ষোভ হয়েছে, অনশনও হয়েছে। কিন্তু বুধবারের সহিংসতা নতুন মোড় নিয়েছে। স্থানীয় নেতা জিগমত পালজোর বলেছেন, “এটি লাদাখের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন।” অনশন ধর্মঘটের স্মৃতিসৌধে সমবেত তরুণরা স্লোগান দিতে দিতে সরকারি ভবনের দিকে অগ্রসর হলে সংঘর্ষ বাঁধে।

লাদাখে রাজনৈতিক বঞ্চনার ইতিহাস নতুন নয়। ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরিদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে প্রাণ হারান তিন লাদাখি। সেই ঘটনার স্মৃতিসৌধেই বুধবার থেকে শুরু হয়েছিল এ আন্দোলন।

কৌশলগত গুরুত্ব

লাদাখ শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, সামরিকভাবেও ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি চীনের সঙ্গে সরাসরি সীমান্ত ভাগ করছে। এখানেই রয়েছে ভারতীয় বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ গিরিপথ, বিমানঘাঁটি ও রসদ সরবরাহের পথ। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকেই লাদাখ ভারত-চীন উত্তেজনার প্রধান কেন্দ্র।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিদ্দিক ওয়াহিদ সতর্ক করেছেন, “২০১৯ সালের পদক্ষেপগুলো ভারতের জন্য এখন অভ্যন্তরীণ হুমকি তৈরি করেছে। কাশ্মীরের পর এবার লাদাখও অসন্তোষের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।”

সামনে কী?

মোদি সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, আন্দোলনের নেতৃত্ব বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। তবে বাস্তবতা হলো, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর তরুণরা সহিংস পথে ঝুঁকছেন। ওয়াংচুক যদিও জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি কখনো সহিংসতার পক্ষে ছিলেন না, তবে সতর্ক করে দিয়েছেন—যদি কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত উদ্যোগ না নেয়, লাদাখের অস্থিরতা আরও বাড়বে।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ভাষায়, “তরুণরা ইতোমধ্যে ধৈর্য হারিয়েছে। তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে না। তাই লাদাখের রাজপথে যে আগুন জ্বলে উঠেছে, তা শুধু গাড়ি বা দপ্তরে নয়—এক প্রজন্মের ক্ষোভের প্রতীক।”

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page