আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপের অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সম্প্রতি তিনি মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সমালোচকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে একনায়কতন্ত্রের পথে নিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের নির্দেশ
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পোস্টে ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “আমরা আর দেরি করতে পারি না। এটা আমাদের সুনাম ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে ধ্বংস করছে।” তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কিছুই হচ্ছে না।
এরপর তিনি সাবেক এফবিআই প্রধান জেমস কোমি, নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস এবং ডেমোক্র্যাট সিনেটর অ্যাডাম শিফের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, শিফ ছিলেন ট্রাম্পের প্রথম অভিশংসন বিচারের তত্ত্বাবধায়ক।
একই সঙ্গে ট্রাম্প পাম বন্ডির প্রশংসা করে বলেন, তিনি “দারুণ কাজ করছেন” এবং ইতিহাসের সেরা অ্যাটর্নি জেনারেলদের একজন হিসেবে পরিচিত হবেন।
ক্ষোভে ডেমোক্র্যাটরা
ডেমোক্র্যাট নেতারা ট্রাম্পের এই আচরণকে সরাসরি “একনায়কতন্ত্রের পথে যাত্রা” বলে অভিহিত করেছেন। সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “বিচার বিভাগ সব সময়ই শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ ছিল— ডেমোক্র্যাট হোক বা রিপাবলিকান। অথচ প্রেসিডেন্ট এটিকে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করছেন।”
প্রসিকিউটর সিবার্টকে বরখাস্ত
ঘটনাটির পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট রয়েছে। ফেডারেল প্রসিকিউটর এরিক সিবার্ট সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি সিবার্টকে বরখাস্ত করেছেন কারণ তিনি লেটিশিয়া জেমসের বিরুদ্ধে বন্ধক জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেননি।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সিবার্ট বিচার বিভাগকে জানিয়েছেন, জেমসকে অভিযুক্ত করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ নেই। কিন্তু ট্রাম্প বলছেন, “এখানে দারুণ একটি মামলা আছে। বহু আইনজীবী ও বিশ্লেষকও তাই বলছেন।”
তিনি আরও জানান, সিবার্টের জায়গায় নতুন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হবে। ট্রাম্প বলেন, “আমার প্রস্তাবিত কড়া প্রসিকিউটর লিন্ডসে হ্যালিগানকে নিয়োগ দিতে হবে, যাতে কাজ এগিয়ে যায়।”
দীর্ঘদিনের হস্তক্ষেপের ইতিহাস
বিবিসি বলছে, ১৯৭০-এর দশক থেকে মার্কিন বিচার বিভাগ প্রেসিডেন্টের প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করে আসছে। কিন্তু ট্রাম্প বারবার সেই নিয়ম ভেঙেছেন।
প্রথম মেয়াদে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে বরখাস্ত করেন।
২০২০ সালের নির্বাচনে জালিয়াতির মিথ্যা দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানালে দ্বিতীয় অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও ট্রাম্প প্রকাশ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও অন্তর্ভুক্ত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প বিচার বিভাগের ওপর তার চাপ বাড়াচ্ছেন স্পষ্টতই ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থে। এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, ক্ষমতায় থেকে তিনি আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের জন্য বড় হুমকি।