বিবিসির প্রতিবেদন
নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের জেরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। এ সহিংসতায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। অস্থির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে কারফিউ জারি রয়েছে এবং সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, নেপাল ভারতের জন্য শুধু প্রতিবেশী নয়, বরং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। প্রায় ১ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমান্তে নেপালের অবস্থান ভারতের উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, সিকিম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। দিল্লি তাই নেপালের সংকটকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ২০২২ সালের শ্রীলঙ্কা অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্সে লিখেছেন, “নেপালের সহিংসতা হৃদয়বিদারক। এত তরুণ প্রাণহানিতে আমি মর্মাহত। নেপালের শান্তি ও স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি।” ইতিমধ্যেই তিনি মন্ত্রিসভার সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ওলির দিল্লি সফরের মাত্র এক সপ্তাহ আগে তাঁর পতন ভারতের জন্য বড় ধাক্কা। কারণ নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ এখন তিন প্রধান রাজনৈতিক দলকেই ঘিরে। একই সঙ্গে চীনও দেশটিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।
ভারত–নেপাল সম্পর্ক শুধু কূটনৈতিক বা রাজনৈতিক নয়; প্রায় ৩৫ লাখ নেপালি ভারতে বসবাস বা কাজ করেন, আর বিশেষ চুক্তিতে ৩২ হাজার গুর্খা সেনা ভারতীয় বাহিনীতে নিয়োজিত। ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক সম্পর্কও গভীর। ভারতের সঙ্গে নেপালের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৮.৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের ওপর কাঠমান্ডু মূলত দিল্লির ওপর নির্ভরশীল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সামনে এখন দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ—অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেশী অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা জোট সার্ক কার্যত অচল থাকায় দিল্লির কূটনৈতিক উদ্যোগ আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল অশোক মেহতা মন্তব্য করেন, “ভারত যদি বড় শক্তি হতে চায়, তবে আগে নিজের প্রতিবেশে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।”