আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ক্ষমতায় আসার আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেস সরকারের সময়ে গরুর মাংস রপ্তানির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি এটিকে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন “পিঙ্ক রেভল্যুশন” এবং দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস কেবল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে খুশি করতে এই খাতকে উৎসাহ দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ খাতেই রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।
বর্তমানে ভারত প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ ৩০ হাজার টন মাংস রপ্তানি করে ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করছে। ফলে দেশটি ব্রাজিলের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাংস রপ্তানিকারক হিসেবে উঠে এসেছে। ভারতের পরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
ভারতে গরু জবাইয়ের নিয়ম রাজ্যভিত্তিক; কোনো অভিন্ন জাতীয় আইন নেই। ফলে শিথিল আইন আছে এমন রাজ্যে গরু পাচার করে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়। সমালোচকদের মতে, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির চেয়ে আর্থিক বাস্তবতাই এই খাতকে টিকিয়ে রেখেছে।
সরকার দাবি করলেও যে রপ্তানির সিংহভাগ মহিষের মাংস, বাস্তবে গরুর মাংসের পরিমাণও কম নয়। ভারতে বর্তমানে প্রায় ১১ কোটি ৫০ লাখ মহিষ ও ৭ কোটি ৬০ লাখ গরু রয়েছে। দুধ উৎপাদন শেষে অনেক গরুই চামড়া ও মাংস শিল্পে ব্যবহার হয়। ফলে গরুর মাংসও বৈদেশিক আয়ের একটি বড় উৎসে পরিণত হয়েছে।
ভারত বর্তমানে ৬৫টি দেশে মাংস রপ্তানি করছে, বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চলে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মুক্ত চারণভূমিতে লালিত গরু-মহিষের মাংস স্বাস্থ্যসম্মত বলে ধরা হয় এবং ভারতীয় মাংসের দাম ব্রাজিল বা অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় অনেক সময় কম হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে ভারত।
অর্থনৈতিক লাভের কারণে হিন্দু ব্যবসায়ীরাও এই শিল্পে সক্রিয়। ভারতের শীর্ষ ছয় রপ্তানিকারকের মধ্যে চারটির মালিক হিন্দু উদ্যোক্তা—আল-কাবির এক্সপোর্টস (শতীশ ও অতুল সাবরওয়াল), অ্যারাবিয়ান এক্সপোর্টস (সুনীল কাপুর), এম.কে.আর ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টস (মাদান অ্যাবট) এবং পি.এম.এল ইন্ডাস্ট্রিজ (এ.এস. বিন্দ্রা)।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে মুসলিম দেশগুলোকে লক্ষ্য রেখে ভারতের সব রপ্তানিকৃত মাংসে হালাল সনদ দেওয়া হলেও, অভ্যন্তরীণ বাজারে বিজেপি সরকার হালাল সার্টিফিকেশন নিষিদ্ধ করেছে। এতে বাইরের বাজারে একরকম নীতি আর দেশের ভেতরে ভিন্ন নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, যে খাতকে মোদী ক্ষমতায় আসার আগে কটাক্ষ করেছিলেন, সেই মাংস রপ্তানি খাতই তার আমলে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত হয়েছে।