আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজা সিটি আবারও ভয়াবহ বিমান হামলায় কেঁপে উঠেছে। ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের অল্প সময় দিয়ে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করার পর একের পর এক বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। সর্বশেষ শনিবার তাল আল-হাওয়া এলাকায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র কার্যালয়ের বিপরীতে থাকা ১৫ তলা সাউসি টাওয়ার মিসাইল হামলায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, মানুষকে মাত্র আধা ঘণ্টা বা সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা সময় দেওয়া হচ্ছে ঘর ছাড়ার জন্য। এতে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়ছে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা।
ইসরায়েল দাবি করছে, এসব ভবন হামাসের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। কিন্তু গাজার সরকারি গণমাধ্যম তা অস্বীকার করে বলছে, এটি নিছকই বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস ও মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার কৌশল। তাদের তথ্যে, গাজার ৯০ শতাংশ অবকাঠামো ইতোমধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
এর আগে শুক্রবারও ১২ তলা মুশতাহা টাওয়ার ধ্বংস করে ইসরায়েলি সেনারা। আন্তর্জাতিক চাপ ও সমালোচনা উপেক্ষা করেই গাজা সিটি দখলের লক্ষ্যে প্রতিদিনই চলছে একের পর এক বোমা বর্ষণ।
এই অবিরাম আগ্রাসনে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী শিশুরা। জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক শিশু, আর প্রায় ১০ লাখ মানুষ ভয়াবহ বাস্তুচ্যুতির মুখে। সংস্থাটির মুখপাত্র টেস ইংগ্রাম বলেছেন, “গাজার প্রতি দুইজনের একজন শিশু, আর তাদের জন্য এখানে জীবন এখন কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে।”
শিশু অধিকার সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন হিসাব দিয়েছে—গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রায় ২৩ মাসে গড়ে প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একজন শিশু নিহত হচ্ছে। এ বাস্তবতাকে তারা বলছে “শিশুহত্যায় নতুন মাত্রা”।
সরকারি হিসাবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ২০ হাজার শিশু নিহত হয়েছে। শুধু গত শনিবার সকালেই ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ৬৭ জন, যাদের মধ্যে ৪৫ জনই গাজার বাসিন্দা। একই দিনে অবরোধজনিত দুর্ভিক্ষে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অনাহারে মারা গেছে ৩৮২ ফিলিস্তিনি, এর মধ্যে ১৩৫ জন শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৪ হাজার ৩৬৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৭ জন আহত হয়েছেন।
গাজার ধ্বংসস্তূপে প্রতিদিন লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে, আর আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা এই মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করছে।
সূত্র: আল-জাজিরা