সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আদালতে মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বাবুল (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে সন্ত্রাস বাহিনী নিয়ে অস্ত্রের মুখে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
রবিবার (৩ আগষ্ট) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আদমজীর শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতির ব্যবসায়িক পার্টনার ও বৈষম্যবিরোধী মামলার আসামী, বিএনপির বহিস্কৃত নেতা শাহ আলম মানিকসহ উক্ত ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে এ মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ভুক্তভোগী বাবুলের বড়ভাই মো: আবুল হোসেন, ছোটভাই মো: সেলিম, স্ত্রী লিপি বেগম, মো: সালাউদ্দিন, হাবিবুর রহমান মন্ডল ও মো: জাবেদ।
ভুক্তভোগী বাবুলের ছোটভাই মো: সেলিম তার বক্তব্যে বলেন, আমরা একটা নিপীড়িত পরিবার। বিগত আওয়ামীলীগের আমলে আমাদের জায়গা-সম্পত্তির বিষয় নিয়ে আওয়ামীলীগের সাথে কিছু কথিত বিএনপি, যারা আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি দুই দলেই যোগসাজশ করে তারা ভূমিদস্যুতা করত। বিগত ২২/২৩ বছর ধরে আমাদের অত্যাচার করতেছে বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ করার জন্য। অনেক কিছুর পরে যখন আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হইল তখন আমরা মনে করলাম স্বাধীনতা ফিরে পাব কিন্তু দেখা গেল ঠিকই সরকার পতন হইল কিন্তু সাধারণ জনগণের কোন মুক্তি হইল না। এখন আমাদের বাড়ি-ঘরে থাকা মুশকিল হয়ে গেছে। আদমজীর কুখ্যাত মতিউর রহমান মতির অন্যতম ব্যবসায়ী পার্টনার মো: শাহ আলম মানিক ওনি একজন কুখ্যাত ভূমিদস্যু। ওনি অস্ত্র মামলা খাইছে এবং বিগত দিনে অসহায় মানুষের জায়গা দখল করে সেই জায়গা সে আত্মসাৎ করে এবং হিন্দুদের জায়গা ওরিয়ন কোম্পানীর মধ্যে শত শত পাখি জায়গা সে দখল করে। আরেক জায়গা পাইলাওয়ালার বাড়ি, বি-ফোর, কিং প্যালেস এ সমস্ত জায়গা দখল করে সে এখন সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
সেলিম বলেন, গত চার দিন আগে আমার মেঝভাই বাবুল হোসেনকে মেরে ফেলার হুমকি দিছে তারাতারি এই বাড়ি-ঘর ছেড়ে দাও অন্যথায় আমাকে এক কোটি টাকা দাও। আমাদের এই বাড়ি ছাড়া অন্য কোন সম্বল নেই। আমাদের ভয়-ভীতি দেখানোর কারণে এবং এরআগে আমার এক ভাতিজা এবং আমার এক ভাইকে থানায় ধরে নিয়ে গেছে, থানায় কোন মামলা নাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় সন্দেহভাজনে নিয়ে টাকা খাইয়ে আমার ভাই-ভাতিজাকে মিথ্যা মামলা দিছে এবং তারা আমাদেরকে হুমকি দিছে আমাদের বংশকে নির্বংশ করে দিবে। আমাদেরকে অস্ত্র দিয়ে, মাদক দিয়ে হয়রানী করবে, জেলে দিবে। তখন আমরা ভয় পেয়ে আমার ভাই-ভাতিজা জেলে যারা আমাদের জমিসংক্রান্ত মামলা চালায় তারা এখন নাই। তারা নাই বিধায় আমার মেঝভাইসহ আমাদেরকে মৃত্যুর হুমকি দিছে।
এ জন্য আমার মেঝভাই আদালতে ৭ ধারায় একটি অভিযোগ করছে যে, আমাদের যদি কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয় তাহলে তারা আমাদের হুমকি দিছে। এটা করার ৩/৪ দিন পরই আমার ভাইকে জালকুড়ি সীমা ডাইং এলাকা থেকে ৩/৪টা হাইয়েস ও ১৫/২০টা মোটরসাইকেল দিয়ে শাহ আলম মানিক, জামান, রাজু এবং হানিফসহ আরো ২৫/৩০ জন লোক ছিল, তারা প্রথমেই আমার ভাইয়ের চোখে পিস্তলের বাট দিয়ে আঘাত করে আহত করে রাস্তায় ফেলে রোল দিয়ে পিটিয়ে হাইয়েসে তুলে। তখন আশ-পাশের লোকজন মনে করেছিল হয়তো তারা ডিবি বা পুলিশের লোক। লোকজন কিছু বুঝে উঠার এবং আশার আগেই তারা আমার ভাইকে গাড়ীতে উঠাইয়া নিয়া সুমিলপাড়া নদীর পাড় নিয়ে যায়। ওই জায়গায় নিয়ে তারা হাত-পা বেধে তাকে নদীতে নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল কিন্তু কিছু মানুষ যাওয়ার পরে তারা বলে যে, সে তো নিরিহ মানুষ। তখন তারা আমাদেরকে ফোন দিল যে বাবুল কাকাকে মেরে ফেলতেছে। ওই মুহুর্তে আমাদের নারী-পুরুষ যারা ছিল তারা দৌড়াইয়া গেছে তারা আমাদের উপরও হাত তুলেছে। তারা আবার মারতে মারতে বি-ফোরের সামনে নিয়া আইছে। বি-ফোরের সামনে আবার মাইরা বলে তোদের কোন বাবা আছে পারলে উদ্ধার করতে বল আমাদের কাছ থেকে। সেখান থেকে আবার শাহ আলম মানিকের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাকে বেধরক পিটাইছে এবং বুকের মধ্যে পারাইছে। তখন সে রক্ত বমি করে। এখন সে মূমূর্ষ অবস্থায় খানপুর হাসপাতালে ৪ দিন ধরে ভর্তি। সরকার এবং জনগণের কাছে আমাদের দাবী আমরা নিরীহ, আমরা আপনাদের কাছে আশ্রয় চাই। আপনারা আমাদেরকে রক্ষা করুন।
ভুক্তভোগী বাবুলের বড়ভাই আবুল হোসেন বলেন, আমার ভাইয়ের উপর শাহ আলম মানিক যে হামলা করেছে আমরা সেই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।