নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশের কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ভারতের মত নয়—বাংলাদেশ উচিত রাষ্ট্রের মর্যাদার ভিত্তিতে দু’পক্ষের সম্পর্ক পরিচালনা করা।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর বিএমএ ভবনে আয়োজিত ‘মাজার সংস্কৃতি—সহিংসতা, সংকট এবং ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সংলাপটি মাকাম সুফি ঐতিহ্য কেন্দ্র আয়োজিত।
স্টেট-টু-স্টেট সম্পর্কের দাবি
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন একই ভূখণ্ডে বসবাস করি—“একই নদীর পানি পান করি” — তাই সম্পর্ক কেবল একটি দলের সঙ্গে নয়, রাষ্ট্র-মর্যাদার ভিত্তিতেই স্থাপন করতে হবে।
সুফি মাজার ও স্থানীয় নেতৃত্বকে স্বাধীনতার আহ্বান
সুলভ ও স্থানীয় সুফিদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর সুশ্রীভাবে নতুন করে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। নাসীরুদ্দীন পরামর্শ দেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে নয়, বরং সংবিধান ও রাষ্ট্রের কাছ থেকেই নিজেদের অধিকার দাবি করে নিজেকে শক্ত করতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, মাজার রক্ষার নামে রাজনৈতিক দলের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দিলে ভবিষ্যতে তারা আপনাদের ‘গোলাম’ বানিয়ে রাখবে।
রাজনৈতিক সত্তা ও গডফাদার উপদেশ
নাসীরুদ্দীন আরও বলেন, দেশে ৩০০ আসনে গডফাদারের উপস্থিতি রয়েছে; ভালো সংসদ সদস্য সিস্টেমে যোগ করে যেতে পারছে না অনেকে। এজন্য তিনি স্থানীয় নেতৃত্বকে গডফাদার বা ব্যক্তিগত ক্ষমতাধরদের কাছে আত্মসমর্পণ না করার আহ্বান জানান।
সুফিবাদের অনুপস্থিতি ও কওমি রাজনীতির প্রসার
তিনি বলেন সুফিবাদের রাজনৈতিকভাবে অনুপস্থিত থাকার সুযোগেই কওমি-ধর্মী রাজনীতি কিছু অঞ্চলে শক্ত হচ্ছে—এমন আশংকাও প্রকাশ করেন।
সংবিধান, জুলাই সনদ ও নির্বাচনের প্রেক্ষাপট
সংলাপে সংবিধান ও জুলাই সনদ প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন। তিনি বলেন, সংবিধান পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান সংবিধান মেনে চলতে হবে; তবে সংবিধানে কিছু সমস্যার কারণেই মাজারে আক্রমণকারীরা অভিযুক্ত হচ্ছে। জুলাই সনদ বিষয়ে তার বক্তব্য — আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা এবং বাস্তবায়নের জন্য আদেশ জারি করা প্রয়োজন। তিনি বলেন আদেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বাক্ষর থাকা উচিত। আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ খোলা থাকবে; বাধা দিলে নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দেশ সংকটে পড়বে।
উপসংহার
নাসীরুদ্দীনের বক্তব্যের সারমর্ম—বহিরাগত কূটচেষ্টাকে অনুধাবন করে রাষ্ট্র-ভিত্তিক কৌশল নেয়ার পাশাপাশি স্থানীয় ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে রাজনৈতিক লেলিহানের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। তিনি দ্রুত আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার গুরুত্বও জোর দিয়ে বলেন।