নিজস্ব প্রতিবেদক :
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে যুক্তিতর্কে তিনি বলেন, “উনি (মামুন) নিজে বাঁচার জন্য অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে দায় এড়াতে চাইছেন।” বুধবার দুপুরে ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আমির হোসেন। তিনি আরও বলেন, মামুন নিজের দায় স্বীকার করলেও তা আংশিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে।
ট্রাইব্যুনালের পাল্টা প্রশ্ন :
আইনজীবীর বক্তব্যে ট্রাইব্যুনাল পাল্টা প্রশ্ন তোলে, “যদি মামুন নিজের বাঁচার জন্য স্বীকারোক্তি দিয়ে থাকেন, তাহলে বাকি আসামিরা এসে সেই সুযোগ নিচ্ছেন না কেন?” জবাবে আমির হোসেন বলেন, “মামুন নিজের ভুল আড়াল করতে অন্যের ওপর দায় দিচ্ছেন।” তবে আদালত পর্যবেক্ষণে জানায়, মামুন নিজের দায় অস্বীকার করেননি; বরং তা প্রকাশ্যে এনেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন আদালত।
‘লেথাল ওয়েপনের নির্দেশ’ বিতর্কে উত্তাপ :
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর জবাবে আমির হোসেন বলেন, “আইজিপি সাহেব অনেক কিছু বলছেন নিজেকে বাঁচাতে। আমি তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি।” তিনি আরও বলেন, মামুনকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির আগে আড়াই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল, যা নির্দেশ করে যে, তার সাক্ষ্য হতে পারে পূর্বপরিকল্পিত।
বিচার প্রক্রিয়া ও মামলার প্রেক্ষাপট :
শেখ হাসিনা, কামাল এবং মামুনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার। এতে শহীদ, দালিলিক প্রমাণ ও তথ্যসূত্রসহ ৮১ জন সাক্ষীর নাম রয়েছে। গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল এ মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেয়। বর্তমানে আমির হোসেনের যুক্তিতর্কের তৃতীয় দিনের শুনানি চলছে, যা আজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।