স্পোর্টস ডেস্ক:
শেষ ওভারে দরকার ছিল মাত্র ৯ রান। হাতে ৪ উইকেট, ক্রিজে ছিলেন ৭৭ রান করা অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। অথচ সেই ওভারে ১ রানেই হারিয়ে বসে ৫ উইকেট! ক্রিকেট ইতিহাসে এমন মর্মান্তিক ভাঙন খুব কমই দেখা গেছে। আর তাতেই নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হলো বাংলাদেশকে। সোমবার ভারতের নাভি মুম্বাইয়ে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে ৭ রানে হেরে যায় টাইগ্রেসরা। টুর্নামেন্টে এটি ছিল তাদের পঞ্চম পরাজয়, টানা হার দেখেই প্রথম দল হিসেবে বিদায় নেয় বাংলাদেশ।
জয়ের দোরগোড়ায় গিয়েও মুখ থুবড়ে পড়া:
২০২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ছিল প্রায় নিয়ন্ত্রণে। শেষ পাঁচ ওভারে প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৭ রান, হাতে তখনও ৭ উইকেট। জ্যোতি ও স্বর্ণা আক্তারের ব্যাটে দল এগোচ্ছিলো জয়ের পথেই। কিন্তু স্বর্ণার বিদায়ের পর যেন সব এলোমেলো হয়ে যায়। ধীরে খেলা, উইকেট ছোড়াছুড়ি, রানআউট, চাপ—সব মিলিয়ে শেষ ওভারে দরকার পড়ে ৯ রানের। লঙ্কান অধিনায়ক চামারি আতাপাত্তু নিজেই বল হাতে নেন এবং পরিণত করেন বাংলাদেশের ইনিংসকে বিভীষিকায়। প্রথম বলে এলবিডব্লিউ হন রাবেয়া, দ্বিতীয় বলে নাহিদা রানআউট, তৃতীয় বলে ক্যাচ তুলে দেন জ্যোতি, চতুর্থ বলেই এলবিডব্লিউ মারুফা। আর শেষ বলে ব্যাটে-বলে না হওয়ায় শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস—সব মিলিয়ে ৬ বলে ৪ উইকেট আর ১ রান।
ক্র্যাম্প, ব্যর্থতা আর সুযোগ হাতছাড়া:
এর আগেই দুর্ভাগ্য শুরু হয় শারমিন সুপ্তার ক্র্যাম্প নিয়ে মাঠ ছাড়ার মধ্য দিয়ে। ৬৪ রানে থাকা এই ব্যাটার ক্রিজে থাকলে হয়তো ফল অন্যরকম হতে পারত। জ্যোতি পরে চেষ্টাও করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ধীর ব্যাটিং (৭৭ রান, স্ট্রাইক রেট ৬৫-এর নিচে) প্রশ্নের জন্ম দেয়। একইভাবে রিতু মনি, স্বর্ণা কিংবা নাহিদা আক্তারদের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বিশেষ করে স্বর্ণা, যিনি এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে দ্রুত ফিফটি করেছিলেন (৩৪ বলে), তাকেও দেখা গেল রক্ষণাত্মক।
পুরোনো ব্যাটিং মানসিকতার ছায়া:
শুরু থেকেই টাইগ্রেসদের ইনিংসে ছিল অতিরিক্ত সতর্কতা। প্রথম ১০ ওভারে স্কোর ছিল মাত্র ২৩/১। ফারজানা হক, সোবহানা মোস্তারি দ্রুত ফিরে গেলে কিছুটা ভেঙে পড়ে ব্যাটিং লাইনআপ। জ্যোতি-সুপ্তার জুটি দলকে আশা দিয়েছিল, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
বল হাতে দারুণ ছিল বোলাররা:
এর আগে, বাংলাদেশ বোলাররা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে ৪৮.৪ ওভারে শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ২০২ রানে অলআউট করে দেয়। মিডল ও ডেথ ওভারে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে টাইগ্রেসরা।
বিশ্বকাপ শেষ হতাশায় :
পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয় দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তী ৫ ম্যাচে টানা পরাজয় যেন বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয়। এবারের মতো বিদায়, তবে রেখে গেল অনেক প্রশ্ন: শেষ ওভারে এমন ভেঙে পড়া কেন? সেট ব্যাটার হয়েও কেন জ্যোতির ধীর ব্যাটিং? সিদ্ধান্তহীনতা ও চাপ ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি কাটবে কবে? বিশ্বকাপ শেষে নিশ্চয়ই এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজবে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে বাস্তবতা হলো—জয়ের মুখ থেকে হারাটাও যে একধরনের শিল্প, সেটাই যেন বারবার দেখিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ নারী দল।