নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে ক্যাম্পাস। শনিবার ঘোষিত ফলাফলে সহসভাপতি (ভিপি) হয়েছেন মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দীন আম্মার এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) নির্বাচিত হয়েছেন এস এম সালমান সাব্বির।
এবারের নির্বাচনে ভিপি ও এজিএস পদে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, আর জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের আলোচিত মুখ সালাহউদ্দীন আম্মার।
নতুন ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনোমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের ২০১৬–১৭ সেশনের শিক্ষার্থী জাহিদ। তার বাড়ি রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলার কচুকাটা ইউনিয়নে। বাবা মো. মোজাহারুল হক স্থানীয় একটি দাখিল মাদরাসার শিক্ষক।
শিক্ষাজীবনে তিনি কৃষি গবেষণা, বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। সহপাঠীদের কাছে শান্ত, অধ্যবসায়ী ও পরিণত মনোভাবের মানুষ হিসেবে পরিচিত জাহিদ একাডেমিক ফলাফলেও উজ্জ্বল — স্নাতকে তার সিজিপিএ ৩.৭৬, স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারে ৩.৯২। ২০২৩ সালে তিনি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ফেলোশিপ পান।
জিএস সালাহউদ্দীন আম্মার
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আম্মারের বাড়ি খুলনা জেলায়। তার বাবা মো. আখতারুজ্জামান স্থানীয়ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন, আর মা রোকেয়া খানম একজন স্কুলশিক্ষিকা।
ঢাকার তামিরুল মিল্লাত মাদরাসা থেকে ২০২১ সালে এইচএসসি পাস করেন আম্মার। ছাত্র রাজনীতিতে তার পথচলা শুরু ২০২০ সালে, শিবিরের সাথী হিসেবে। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরই তিনি আলোচনায় আসেন।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত ‘স্লোগান মাস্টার’ নামে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও তিনি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সংগঠক। প্রশাসনিক চাপ সত্ত্বেও আন্দোলনে তার নেতৃত্ব অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এজিএস এস এম সালমান সাব্বির
পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯–২০ সেশনের শিক্ষার্থী সাব্বিরের বাড়ি রাজশাহী সদর উপজেলায়। তিনি রাজশাহী ক্যাডেট মাদরাসা ও মসজিদ মিশন একাডেমিতে পড়াশোনা শেষ করে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করেন।
সাব্বির বর্তমানে ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের যুব ইউনিটের সক্রিয় সদস্য। তিনি রক্তদান কর্মসূচি, সামাজিক সেবা ও সচেতনতা কার্যক্রমের নিয়মিত অংশগ্রহণকারী। সহপাঠীদের কাছে পরিচিত একজন মানবিক সংগঠক হিসেবে।
নির্বাচনের সারসংক্ষেপ
রাকসুর ২৩টি পদের মধ্যে ২০টি পদে জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট। বাকি তিনটি পদে জয় পেয়েছেন বিভিন্ন জোটের প্রার্থী —
জিএস: সালাহউদ্দীন আম্মার (আধিপত্যবিরোধী ঐক্য)
ক্রীড়া সম্পাদক: নার্গিস আক্তার (ছাত্রদল সমর্থিত, জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়)
বিজ্ঞান সম্পাদক: তোফায়েল আহমেদ তোহা
হল সংসদ নির্বাচনে ১৭টি হলের ২৫৫টি পদের মধ্যে ২৩৪টিতেই জয় পেয়েছে শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা। রাকসুর এই নির্বাচন শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নয়, বরং দেশের ছাত্র রাজনীতিতেও এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।