আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইউরোপের দেশ পর্তুগালে জনসমক্ষে নিকাব বা বোরকা পরা নিষিদ্ধ করার বিল পার্লামেন্টে পাস হয়েছে। দেশটির দক্ষিণপন্থী চেগা পার্টি উত্থাপিত এ বিলটি মূলত মুসলিম নারীদের বোরকা ও নিকাব পরিধানের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের লক্ষ্যে প্রস্তাব করা হয়েছিল।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে বিলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে গৃহীত হয়। এতে বলা হয়েছে, জনসমক্ষে নিকাব পরলে ২০০ থেকে ৪ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি, কাউকে জোরপূর্বক নিকাব পরাতে বাধ্য করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
তবে আইনটির আওতার বাইরে থাকবে উড়োজাহাজ, কূটনৈতিক প্রাঙ্গণ ও উপাসনালয়গুলো, অর্থাৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিকাব পরা যাবে।
চেগা পার্টির দাবি, “এটি নারীর স্বাধীনতার সুরক্ষা” বিল পাসের পর চেগা পার্টির নেতা আন্দ্রে ভেনচুরা বলেন, “আজ আমরা আমাদের মেয়েদের, আমাদের দেশের নারীদের মুখ ঢেকে রাখতে বাধ্য হওয়া থেকে রক্ষা করেছি। এটি আমাদের গণতন্ত্র, মূল্যবোধ এবং নারীর অধিকারের বিজয়।”
তিনি আরও দাবি করেন, নিকাব ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও নারীর স্বাধীনতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ—তাই এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ জরুরি ছিল।
বিরোধীদের মত: ‘এটি বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ’ বিলের বিরোধিতা করেছেন সংসদের বামপন্থী ও মানবাধিকারপন্থী আইনপ্রণেতারা।ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য আন্দ্রেয়া নেটো বলেন,
“এটি নারী-পুরুষের সমতার প্রশ্ন। কোনো নারীকে তার মুখ ঢেকে রাখতে বাধ্য করা উচিত নয়, তবে তাকে কীভাবে পোশাক পরবে সেটিও রাষ্ট্র নির্ধারণ করতে পারে না।”
এছাড়া দুটি ছোট দল—পিপল-অ্যানিমেলস-নেচার পার্টি এবং টুগেদার ফর দ্য পিপল পার্টি—ভোটদানে বিরত থাকে, যুক্তি হিসেবে তারা বলে,
“এই প্রস্তাব সামাজিক বিভাজন ও ধর্মীয় বৈষম্যকে উসকে দেয়।”
বিল এখনো আইনে পরিণত হয়নি
বিলটি এখন যাবে সাংবিধানিক বিষয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে। সেখানে যাচাই-বাছাই শেষে এটি আইনে পরিণত হবে। তবে প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো ডি সুজা চাইলে বিলটিতে ভেটো দিতে পারেন, অথবা এটি সাংবিধানিক আদালতে পাঠাতে পারেন পুনর্মূল্যায়নের জন্য।
ইউরোপে নিকাব নিষিদ্ধের প্রবণতা
বিলটি আইনে পরিণত হলে পর্তুগাল যুক্ত হবে ইউরোপের সেই দেশগুলোর সঙ্গে, যেখানে ইতোমধ্যে জনসমক্ষে নিকাব পরা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ— যেমন: ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস।
সূত্র: আল জাজিরা