অনলাইন ডেস্ক:
অন্তর্বর্তী সরকার চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সি–ই মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে—প্রাথমিকভাবে এ চুক্তির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরগরম ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রশ্ন তোলায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সদ্য প্রকাশিত ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং জাতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতেই ২০টি জে-১০ সি–ই যুদ্ধবিমান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্ট্যাটাসে চুক্তি বাস্তবায়নের সম্ভাব্য সময়সীমা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে চলতি অর্থবছর ২০২৫-২৬ এবং পরের অর্থবছর ২০২৬-২৭।
তবে নির্বাচনঘনিষ্ট একটি সরকারী এ ধরনের বড় প্রতিরক্ষা ক্রয়ায় কতটা যুক্তি আছে—এ প্রশ্ন তুলেছেন সরকারি পদক্ষেপের সময়কাল ও প্রভাব নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ. ন. ম. মুনীরুজ্জামান বলেছেন, “এ ধরনের বড় কেনাকাটা অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ পর্যায়ে করা হলে তা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর আর্থিক ও কৌশলগতভাবে বেঁচে যায়। ফলে সিদ্ধান্তটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ছেড়ে দেওয়াই যুক্তিসঙ্গত।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করান যে প্রতিরক্ষা ও বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ—কারণ বর্তমানে বাংলাদেশ যে বিমান ব্যবহার করছে, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে পুরানো মডেলের। তারা বলছেন, সেক্ষেত্রে আধুনিক মাল্টি-রোল প্ল্যাটফর্ম যোগ করা যুক্তিসংগত হতে পারে।
জে-১০ সি–ই নিয়ে জানা যায়: সামরিক বিশ্লেষকরা বলেন, জে-১০ সিরিজের উন্নত সংস্করণ জে-১০ সি–ই হচ্ছে একক ইঞ্জিনবিশিষ্ট মাল্টি-রোল ফাইটার। এটি দ্রুত টেক-অফ, উচ্চমাত্রায় ওঠানামা ও তীক্ষ্ণ টার্নিংয়ে কার্যকর এবং এয়ার-টু-এয়ার ও এয়ার-টু-গ্র্যান্ড লক্ষ্যদায়িত্ব উভয়েই সক্ষম বলে বলা হয়। একই সঙ্গে বলা হয়, জেটটির তাত্ত্বিক ক্রুজিং ও সর্বোচ্চ গতি উচ্চ—যা নিয়মিত টেকনিক্যাল বিবরণে উল্লেখ থাকে।
রাজনৈতিক ও কৌশলগত প্রেক্ষাপট: গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পরে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত মার্চে চীন সফর করেন; এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা ও শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও চীন সফর করেছেন। আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন ঘোষণার প্রেক্ষাপটে—সরকারের হাতে ভোটের আগে মাত্র কয়েক মাস সময় থাকায়—এ ধরনের বড় আকারের প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।
অতীতের প্রস্তাবের উল্লেখ: এর আগেও বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশ যুদ্ধবিমান কেনার আলোচনা করেছে—ফ্রান্সের রাফাল, ইউরোফাইটার টাইফুন এবং এফ-১৬ নিয়ে আলোচনা হলেও অর্থনৈতিক ও কৌশলগত কারণেই তা বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে আবার পুরোনো আলোচনা ট্র্যাক ফিরে এসেছে—কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অর্থায়ন ও চুক্তি-ধরণ (সরাসরি ক্রয় নাকি সরকার-থেকে-সরকার/জি টু জি পদ্ধতি) পরিষ্কার হওয়া এখনো বাকি আছে।
বিশ্লেষক ও ভবিষ্যৎ নির্দেশনা: নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেন, সামরিক সক্ষমতা নীতিগতভাবে রক্ষণাবেক্ষণীয়। তবে সরকারী স্বচ্ছতা, ব্যয়ের উৎস ও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির দায়-দায়িত্ব কারা বহন করবেন—এসব বিষয় নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতিতে খোলসাভিত্তিক আলোচনা ও লাগাতার নীতি নির্ধারণের দাবি জাগায়। তাদের মতে, এমন বড় কেনাকাটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সর্বজনীন আলোচনা ও নির্বাচিত সরকারের নীতিনির্ধারণ যুক্তিযুক্ত হবে।
উপরের প্রতিবেদনটি মূল তথ্য ধরে রেখে সংকলিত ও পুনর্লিখন করা হয়েছে যাতে পাঠক দ্রুত মূল বিষয়টি বুঝতে পারেন ও বিষয়টিকে রাজনৈতিক, কৌশলগত ও সামরিক দিক থেকে আলোকপাত করে পড়তে পারেন।