নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্দোলন দমনে সরকারের পরিকল্পনা ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনার বিষয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও রাজসাক্ষী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ তিনি এ জবানবন্দি দেন।
মামুন জানান, ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি দেখতে যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে অবস্থান করেন তারা। সে সময় ওয়ারী জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মোবাইলে একটি ভিডিও দেখান। ভিডিও দেখিয়ে তিনি বলেন, “গুলি করি একজন মরে, একজন আহত হয়। সেই যায়। বাকিরা যায় না।”
মামুনের জবানবন্দি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরাপত্তা সমন্বয় কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানসহ ২৭ জন উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলন দমন কৌশল নিয়ে আলোচনা চলাকালে পরিস্থিতি অবনতির কারণে বৈঠক মুলতবি করা হয়। রাতেই আবার বৈঠক ডেকে ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ ঠেকাতে পুলিশ-সেনাবাহিনীর সমন্বিত অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়।
মামুন জানান, ১৮ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে ফোনে জানান যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর থেকেই সারা দেশে পুলিশকে লেথাল উইপেন ব্যবহারের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়।
তার দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মেয়র ফজলে নূর তাপস, ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা প্রধানমন্ত্রীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে প্ররোচিত করেছিলেন। এ ছাড়া, আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী ও ব্যবসায়ীরাও আন্দোলন দমনে কঠোর অবস্থানের পক্ষে ছিলেন।
জবানবন্দিতে মামুন আরও বলেন, আন্দোলন দমনের নামে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে হতাহতের ঘটনায় তিনি অনুতপ্ত। “এসব ঘটনার জন্য অপরাধবোধ করছি। স্বজন হারানোদের কান্না শুনে ও নৃশংসতার ভিডিও দেখে বিবেকের তাড়নায় রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”