নিজস্ব প্রতিবেদক :
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। এই সময়ের মধ্যে তারা ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জুলাই সনদের প্রস্তাবগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। এরপর ৪৫ দিনের মধ্যে পিআর (Proportional Representation/আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে সংসদের একটি উচ্চকক্ষ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। মোট ৩১৫ দিনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্নের এমন সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই সুপারিশের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি জানান, কমিশনের প্রস্তাব তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত — যেসব বিষয় সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছাড়াই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সরকার যেন সেগুলো দ্রুত কার্যকর করে। যেসব সুপারিশ অফিস আদেশ বা সরকারি নির্দেশনার মাধ্যমেই কার্যকর করা সম্ভব, সেগুলোও দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে একটি আইনি কাঠামো তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই অংশে ৪৮টি বিষয়ে সরকারের জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা সরকারকে সুপারিশ করেছি—একটি ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫: সংবিধান সংস্কারবিষয়ক’ আদেশ জারি করতে। এর আওতায় সরকার একটি গণভোটের আয়োজন করবে, যেখানে জনগণের কাছে প্রশ্ন তোলা হবে—তারা প্রস্তাবিত ৪৮টি সংবিধান সংশোধন বাস্তবায়নের পক্ষে কিনা।” গণভোটে জনগণের সম্মতি পাওয়া গেলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও সংসদ হিসেবে কাজ করবে। এই পরিষদ ২৭০ দিন কার্যকর থাকবে এবং জুলাই সনদে বর্ণিত সংশোধনীগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সব বিধি, সংযোজন-বিয়োজন ও পরিমার্জনের কাজ সম্পন্ন করবে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার কমিশন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন—সব কটিই সংসদের একটি ১০০ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছে। এই উচ্চকক্ষ ভোটের সংখ্যানুপাতে গঠিত হবে, অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ভোটের অনুপাতে আসন পাবে। জনগণের সম্মতি ও সংবিধান সংশোধন সম্পন্ন হওয়ার পর ৪৫ দিনের মধ্যেই উচ্চকক্ষ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় আমরা দেখেছি, সাংবিধানিক বিষয়ের বাইরে প্রায় সব বিষয়েই ঐকমত্য রয়েছে। সংবিধান সংশোধনের বিষয়েও বহু ক্ষেত্রে মতৈক্য তৈরি হয়েছে, কিছু পার্থক্য অবশ্য এখনো আছে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন শুরু হলে এই পার্থক্যও দূর করা সম্ভব।”