অনলাইন ডেস্ক:
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশের বাইরে চলে যান। সেই ঘটনায় বিস্মিত হয়েছিলেন তৎকালীন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকারের কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকারী এক কর্মকর্তা “আমার দেশ”কে জানিয়েছেন, হাসিনা পালিয়ে যাবেন—এমনটা তিনি কখনও ভাবেননি।
৫ আগস্ট পর্যন্ত শিরীন শারমিন সংসদ ভবন এলাকার বাসভবনে ছিলেন। দুপুরের দিকে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলেও তিনি বিচলিত ছিলেন না। তিনি সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশের লেকপাড়ের বাসায় বসে দাপ্তরিক কাজ চালাচ্ছিলেন এবং কিছু জরুরি ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন।
সংসদ এলাকা থেকে স্পিকারের পলায়নের বর্ণনা দিয়ে জানা যায়, দুপুরের পর হাজার হাজার ছাত্র-জনতা গণভবন ও সংসদ ভবন অভিমুখে রওনা হন। তখন শিরীন শারমিন দ্রুত ব্যক্তিগত গাড়িতে সংসদ এলাকা ত্যাগ করেন। গাড়িতে তার স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইন এবং ছোট ছেলে ছিলেন।
বর্তমানে সাবেক স্পিকার কোথায় আছেন তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে গুজব রয়েছে, তিনি স্বামীসহ সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে কোনো অফিসিয়াল তথ্য নেই। কিছু সূত্রের দাবি, তিনি ঢাকায় নিজের ভাইয়ের বাসায় অবস্থান করছেন।
নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম দিকে শিরীন শারমিন খিলক্ষেত এলাকায় অবস্থান করছিলেন। একবার গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে অজ্ঞাত কারণে তা কার্যকর হয়নি। এরপর তিনি নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে রাজধানীর একটি অত্যন্ত সুরক্ষিত স্থানে নিকটাত্মীয়ের বাসায় চলে যান। সেখানে অবস্থান করে তিনি নতুন সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য আঙুলের ছাপ ও ছবি দিয়েছেন।
সরকারি ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, শিরীন শারমিন দেশের কোথায় থাকছেন তা নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কাছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখার কর্মকর্তা জানান, সরকারিভাবে নির্দেশনা এলে তা অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করা হবে। আদালতের কোনো নির্দেশনা বা পরোয়ানা এলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
এছাড়া, সাবেক স্পিকারের বিষয়ে চলমান হত্যা মামলার এক বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি। সরকারের অন্তর্বর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে টানাপোড়েন চলছে।
গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, সাবেক স্পিকার এখন ঢাকার সুরক্ষিত একটি এলাকায় অবস্থান করছেন। পাসপোর্টের জন্য আবেদন ও আইরিস ও আঙুলের ছাপের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি নিজেকে আইনি দিক থেকে প্রস্তুত করছেন। তবে তিনি এখনও আত্মগোপনে আছেন এবং সরকারের কাছে তার অবস্থান নিয়ে কোনো অফিসিয়াল তথ্য নেই।
শিরীন শারমিনের এই অবস্থান ও তার চলমান আত্মগোপন দেশীয় রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা তৈরি করেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সাবেক স্পিকারের কর্মকাণ্ড, পলায়ন ও সীমান্ত অতিক্রমের বিষয়গুলো ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।