নিজস্ব প্রতিবেদক :
মানবতাবিরোধী তিন মামলার আসামি ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে কারা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোডে অবস্থিত সাব-জেলে রাখা হয়েছে। আসামিদের আনা-নেওয়ার সময় ব্যবহৃত গাড়িটি সবুজ রঙের, ‘বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যান’ লেখা এবং সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
এই ১৫ সেনা কর্মকর্তার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছে। খাবারের মেন্যুতে রয়েছে রুটি, সবজি, মাছ ও মাংস। সকাল বেলায় রুটি ও সবজি দেওয়া হয়, দুপুরে ভাত, ডাল, সবজি এবং মাছ বা মাংস থাকে, আর রাতের খাবারে মাছ বা মাংসের সঙ্গে সবজি পরিবেশন করা হয়।
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. তানভীর হোসেন জানিয়েছেন, আদালতের আদেশ মোতাবেক তারা সাব-জেলে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থাকবেন। ২৩ অক্টোবর সকাল সোয়া ৭টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভ্যানে আদালতে আনা হয়। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২০ নভেম্বর।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন যুগান্তর জানান, এই ১৫ কর্মকর্তা সেনানিবাসের সাব-জেলে থাকবেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ও জেলা অফিসাররা সাব-জেলটির তদারকি করবেন। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক একজন ডেপুটি জেলা অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। কারাবিধি অনুযায়ী অন্যান্য বন্দিদের মতোই এই ১৫ কর্মকর্তারও সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
একদিকে, আসামিদের আদালতে আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত আধুনিক গাড়ি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আইজি (প্রিজন্স) জানান, নিরাপত্তার কারণে পুলিশের অনুরোধে ওই গাড়িটি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ধরনের আধুনিক গাড়ি মোট ছয়টি রয়েছে এবং শুক্রবার-শনিবার ভিআইপি বন্দিদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম বলেন, আসামিরা ভিআইপি বন্দি হিসেবে কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই গাড়িটি ব্যবহার করেছে, গাড়িটি তাদের (পুলিশ) নয়।
সাব-জেলে বন্দিদের থাকার ঘরে একটি বিছানা, চেয়ার, টেবিল, পত্রিকা ও একটি ফ্যান রয়েছে। পাশাপাশি চা পান করারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ও জেলা কর্মকর্তারা তিন শিফটে সাব-জেলের দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের নেতৃত্বে তিনজন ডেপুটি জেলা দায়িত্বে থাকবেন, যারা নিয়মিত পরিবর্তিত হবেন।
এআইজি (প্রিজন্স) জান্নাতুল ফরহাদ বলেন, আসামিদের বর্তমানে কারা কর্তৃপক্ষের অধীনে রাখা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য আদালতে হাজিরা দিতে পুলিশ তাদের হেফাজতে নেবে এবং ফের আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেবে। কারাবিধি অনুযায়ী তাদের খাবার ও অন্যান্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
মোট ৩২ জন আসামির মধ্যে ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ১২ অক্টোবর থেকে ওই সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হয়।