নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রায় দুই দশকের সংসার শেষ হলো অবিশ্বাস আর লোভের করুণ পরিণতিতে। সন্দেহ আর সম্পত্তি আত্মসাতের আশঙ্কা থেকেই স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে মরদেহ ডিপ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন মো. নজরুল ইসলাম (৫৯)। সন্তানদের ফুফুর বাড়িতে রেখে আত্মগোপনে গেলেও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়লেন পুলিশের জালে।
কলাবাগান থানা পুলিশের হাতে মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর নবাবপুর রোড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন নজরুল। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাসার ওয়্যারড্রব থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো দা।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, ১২ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে নজরুল ঘরে ফিরে দেখেন দরজার দুটি লক খোলা। দীর্ঘদিনের সন্দেহ—স্ত্রীর পরকীয়া ও টাকার ভয়—তাকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের মাথায় ধারালো দা দিয়ে আঘাত করে তিনি হত্যা করেন।
হত্যার পর মরদেহ গামছা ও চাদরে মুড়ে ডিপ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন নজরুল। রক্তমাখা তোশক উল্টে দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করেন এবং জামাকাপড় ধুয়ে আলামত গোপনের চেষ্টা করেন। পরদিন সকালে বড় মেয়েকে বলেন, “তোমার মা অন্য কারও সঙ্গে চলে গেছে।” এরপর দুই মেয়েকে আদাবরে ফুফুর বাসায় রেখে প্রাইভেটকারে পালিয়ে যান।
সন্দেহজনক আচরণে তাসলিমার ছোট ভাই নাঈম হোসেন ও দুই মেয়ে ১৩ অক্টোবর কলাবাগান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে পুলিশ দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে ডিপ ফ্রিজের ভেতরে মাছ-মাংসের নিচে চাদর মোড়ানো অবস্থায় তাসলিমার মরদেহ উদ্ধার করে।
সিআইডির সহায়তায় সুরতহাল শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়। ওই রাতেই নিহতের ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।
ডিসি মাসুদ আলম বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে নজরুলের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল জানান, দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল। তিনি আশঙ্কা করতেন, স্ত্রী তার সম্পত্তি ও ব্যাংকের টাকায় হাত দিতে পারে। এমনকি তার দুটি অ্যাকাউন্টে এক কোটি ও ৪০ লাখ টাকা ছিল, যার নমিনি ছিলেন তাসলিমা। এই ভয় ও সন্দেহ থেকেই তিনি এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটান।