October 27, 2025, 8:03 pm
Headline :

“জুলাই আন্দোলনে হাসিনার হেলিকপ্টার-আদেশ ও গুলির নির্দেশ প্রমাণিত”: চিফ প্রসিকিউটর

নিজস্ব প্রতিবেদক :

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম দাবি করেন—অডিও, ফরেনসিক, ফ্লাইট চার্টার ও বলপ্রয়োগের ভিডিওসহ প্রমাণ পেশ করা হয়েছে; বৃহস্পতিবারও প্রসিকিউশন যুক্তিতর্ক চালাবে।

সংক্ষিপ্ত সারমর্ম:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আদালতে অডিও, ফরেনসিক রিপোর্ট, ফ্লাইট চার্টার, ভিডিও ফুটেজ ও মৃত/আহতদের শরীর থেকে বের হওয়া বুলেটসহ বিস্তারিত সাক্ষ্যপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিবেদন :
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১, বুধবার — চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চতুর্থ দিনে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে বলেন, জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনকালে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো ‘ওয়াইডস্প্রেড’ ও ‘সিস্টেমেটিক’ আক্রোশ প্রমাণিত করার পর্যাপ্ত দলিল তারা আদালতে দাখিল করেছেন।

প্রধান পয়েন্টসমূহ:
চিফ প্রসিকিউটরের কথায়, শেখ হাসিনা তিনজনের সঙ্গে কথোপকথনে নিশ্চিত করেছেন যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র (ল্যাথাল উইপন) ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করতে হবে। একই অডিওতে নির্দেশ রয়েছে—ড্রোন দিয়ে অবস্থান শনাক্ত করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও বোমিং করা হবে; ‘প্যারাট্রুপার’ নামানো হবে; নারায়ণগঞ্জে হেলিকপ্টার-অনির্দেশ ও ছত্রিসেনা নামানোর কথাও বলা হয়েছে। আদালতে শোনা অডিওর কণ্ঠস্বর শনাক্তে বাংলাদেশ সিআইডি’র ফরেনসিক পরীক্ষাসহ বিবিসি ও আল জাজিরার নিয়োগকৃত একটি স্বতন্ত্র সংস্থাও প্রতিষ্ঠিত করেছে যে কণ্ঠটি শেখ হাসিনার — এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তি (এআই) ব্যবহার করে বানানো নয়, দাবি করলেন প্রসিকিউটর।

হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংক্রান্ত ‘ডিটেইলড ফ্লাইট চার্টার’ সংগ্রহ করা হয়েছে; ফ্লাইটের সময়কাল, পাইলট ও যাত্রীদের তালিকা, সেখানে উপস্থিত সৈনিক/অফিসারদের তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। ব্যবহৃত অস্ত্রের তালিকা ও কত রাউন্ড গুলি হয়েছে তার হিসাব, আহতদের ভিডিও ফুটেজ, শহীদ-বাছাই ও মৃতদের শরীর থেকে বুলেট বের করে তার ব্যাখ্যা — এসবও প্রমাণ হিসেবে তোলা হয়েছে। প্রসিকিউটরের বক্তব্য অনুযায়ী, বুলেটদের গ্রেড ও উৎস নির্ণয় করে দাখিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর তৎকালীন প্রধানও আদালতে স্বীকার করেছেন যে প্রাণঘাতী অস্ত্র ও হেলিকপ্টার ব্যবহারের নির্দেশ পেয়েছিলেন; সেই নির্দেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছেছে এবং এরপর তা মাঠ পর্যায়ে কার্যকর হয়েছে।
পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুইটির যুক্তিতর্ক শেষ হয়; প্রসিকিউশন বৃহস্পতিবারও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে।

প্রসিকিউটরের উদ্ধৃতিওয়ালা অংশ থেকে:
“এই কথোপকথনের মধ্য দিয়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার অর্থাৎ সারাদেশব্যাপী ‘ওয়াইডস্প্রেড’ এবং ‘সিস্টেমেটিক’ যে হামলার কথা আমরা বলছি, সেটি সংঘটনের জন্য তাঁর সরাসরি নির্দেশ প্রমাণিত হয়েছে।”
“ডকুমেন্টারি এভিডেন্স, পত্রপত্রিকার রিপোর্ট, ভিডিও ফুটেজ—সবকিছু আমরা দেখিয়েছি; বুলেট, অস্ত্র, ফ্লাইট চার্টার—চেইনটা আমরা ট্রাইব্যুনালে অকাট্যভাবে তুলে ধরেছি।”

পটভূমি ও পরবর্তী ব্যবস্থা
চলতি মামলায় প্রধান আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে—স্বৈরাচার হিসেবে উল্লেখ করা শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক আইজিপি সহ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক শেষ করে, পরবর্তী পর্যায়ে আদালত প্রতিরক্ষা/ডিফেন্সের বক্তব্য গ্রহণ ও প্রমাণ যাচাই করবেন। প্রসিকিউটর জানিয়েছেন—এই প্রমাণ আন্তর্জাতিক বা দেশীয় যে কোনও আদালতে উপস্থাপন করলে অপরাধ প্রমাণ সম্ভব হবে, এমনটাই তাদের দাবি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page