বাসস :
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদারের প্রত্যাশায় বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তার এই ঘোষণাকে ‘অসাধারণ এক সম্ভাবনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরাম (WFF) সম্মেলনের ফাঁকে গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) এ দু’জনের মধ্যে একান্ত বৈঠকে এ সফরের প্রসঙ্গ ওঠে।
বাংলাদেশ সফরে আগ্রহ প্রেসিডেন্ট লুলার:
বৈঠকে প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, “আমি বাংলাদেশে যাব। তিনি জানান, আসছে বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এই সফর সম্পন্ন করতে আগ্রহী তিনি। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান এবং সফরটি দুই দেশের সামাজিক, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনায় উঠে এল সামাজিক ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা ও জলবায়ু বৈঠকে দু’নেতা আলোচনা করেন সামাজিক ব্যবসা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে। প্রেসিডেন্ট লুলা জানান,“ব্রাজিল চায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে এবং নিজেদের সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা মডেল ভাগাভাগি করতে।” তারা আরও আলোচনা করেন সমুদ্রসম্পদ, ফার্মাসিউটিক্যালস (বিশেষ করে টিকা) এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্ভাব্য অংশীদারত্ব নিয়ে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ইউনূসের মন্তব্য:
প্রেসিডেন্ট লুলা অধ্যাপক ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানান আগামী বছর ব্রাজিলের অ্যামাজন অঞ্চলে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০ (COP30)–এ অংশ নিতে। তবে ইউনূস জানান, “আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে গত ১৬ বছরে দেশের প্রথম বাস্তব ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন—যার প্রস্তুতিতে আমি ব্যস্ত থাকব।” তিনি অতীতের নির্বাচনগুলোকে ‘কারচুপিপূর্ণ ও স্বৈরতান্ত্রিক’ বলেও মন্তব্য করেন। বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশ-ব্রাজিল বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। পাশাপাশি হালকা হাস্যরসের মধ্য দিয়ে ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে ব্রাজিল ফুটবল দলের অগণিত সমর্থক রয়েছে। ফুটবল আমাদের বন্ধুত্বের শক্ত ভিত্তি হতে পারে।”
এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন:
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফারিদা আখতার,এসডিজি মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ,পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম।
অন্যদিকে ব্রাজিলের পক্ষ থেকে ছিলেন প্রেসিডেন্ট লুলার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও উপদেষ্টা।
এই সফরের আগ্রহ ও বৈঠকের বার্তা স্পষ্ট—বাংলাদেশ ও ব্রাজিল সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি সত্যিকারের অংশীদারিত্ব গড়তে আগ্রহী।