October 27, 2025, 10:09 pm
Headline :

টোল আদায়ে চুক্তিতে অনিয়ম শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে ৩০৯ কোটি টাকার মামলা করবে দুদক

টোল আদায়ে চুক্তিতে অনিয়ম শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে ৩০৯ কোটি টাকার মামলা করবে দুদক

স্টাফ রিপোর্টার

মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায় চুক্তিতে ব্যাপক অনিয়ম ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে সরকারের আনুমানিক ৩০৯ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

রোববার (১২ অক্টোবর) দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার আসামি কারা

দুদকের মামলা সূত্রে জানা গেছে, এই মামলায় আসামি হিসেবে নাম এসেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের।

তাছাড়া সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক জলিল, উপসচিব মোহাম্মদ শফিকুল করিম, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবাল ও ইবনে আলম হাসান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আফতাব হোসেন খান ও মো. আব্দুস সালামকেও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

এ ছাড়া টোল আদায়ের দায়িত্ব পাওয়া কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী, পরিচালক সেলিনা চৌধুরী ও ইকরাম ইকবালকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

দুদকের অভিযোগ

দুদক জানিয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এটি দণ্ডবিধি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

২০১৬ সালে সিএনএস লিমিটেডকে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ক্রয়নীতি ও টেন্ডার প্রক্রিয়া উপেক্ষা করা হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে আগের দরপত্র বাতিল করে ‘একক উৎসভিত্তিক দরপত্র’ আহ্বান করা হয়, যেখানে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

এরপর শুধুমাত্র সিএনএস লিমিটেডের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পাঁচ বছরের জন্য টোল আদায়ের চুক্তি সম্পন্ন হয়। এতে টোল আদায়ের মোট আয়ের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ (ভ্যাট ও আয়কর ছাড়া) নির্ধারণ করা হয়, যা পূর্ববর্তী চুক্তির তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি ছিল।

পূর্বের তুলনায় ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি

দুদকের তদন্তে জানা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত একই সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা এমবিইএল-এটিটি যৌথভাবে মাত্র ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় কাজ সম্পন্ন করে।
কিন্তু সিএনএস লিমিটেড একই মেয়াদের কাছাকাছি সময়ের জন্য ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকার বেশি বিল গ্রহণ করে।

পরে ২০২২-২০২৫ মেয়াদে ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে একই কাজের জন্য ৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় (ভ্যাট ও করসহ) চুক্তি দেওয়া হয়, যা পাঁচ বছরের হিসেবে দাঁড়ায় প্রায় ১১২ কোটি টাকা।

তুলনামূলক বিশ্লেষণে দুদক বলছে, শুধু সিএনএসকে কার্যাদেশ দেওয়ার কারণে সরকারের মোট ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ ছাড়া সিএনএস লিমিটেড ‘নতুন প্রযুক্তি স্থাপন’ ও ‘অবকাঠামো উন্নয়ন’ ব্যয়ের নামে আরও ৬৭ কোটি টাকার অতিরিক্ত বিল দাবি করে।

যোগসাজশের অভিযোগ

দুদক মনে করছে, সিএনএস লিমিটেডের পরিচালক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্যরা যোগসাজশে অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত করেছেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এর মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
এর পর থেকে দুদক শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার অনুসন্ধান শুরু করে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে, যেখানে প্রায় ৬৩৫ কোটি টাকার লেনদেন চিহ্নিত করা হয়েছে।

দুদকের পরবর্তী পদক্ষেপ

দুদক সূত্র জানায়, টোল আদায় সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে প্রস্তুতকৃত মামলাটি এখন কমিশনের অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। অনুমোদন পেলেই আগামী সপ্তাহের মধ্যেই মামলা দায়ের করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page