নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর অভিজাত এলাকায় অবৈধ সিসা বারের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে এবার সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর এক নাম—বুশরা আফরিন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের কন্যা এবং বাংলাদেশ ও এশিয়ার প্রথম ‘চিফ হিট অফিসার’ (চিফ হিট অফিসার – CHO) হিসেবে পরিচিত বুশরার নাম এবার উঠে এসেছে সিসা বার পরিচালনার অভিযোগে। সিসা লাউঞ্জে অভিযান, আটক ৫।
গত ১৯ আগস্ট রাতে গুলশানের ‘দ্য কোর্ট ইয়ার্ড বাজার’ নামের একটি সিসা লাউঞ্জে অভিযান চালায় গুলশান থানা পুলিশ।
অভিযানে প্রায় চার কেজি সিসা, একাধিক হুক্কা সেটআপ, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাদকদ্রব্য ও নগদ অর্থ জব্দ করা হয়।现场 থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, জায়গাটি মূলত ক্যাটারিং ব্যবসার জন্য ভাড়া নেওয়া হলেও পরে তা অনুমোদন ছাড়াই রেস্টুরেন্ট ও সিসা বারে রূপান্তর করা হয়।
গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, “সিসা বারের মালিককে পাওয়া যায়নি, তবে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
মালিকানা ও মামলায় যাদের নাম জানা গেছে, উক্ত সিসা বারের মালিক বুশরার স্বামী শরিফ আল জাওয়াদ।
এই ঘটনায় জাওয়াদ, পরিচালক আফরোজা বিনতে এনায়েতসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ নিশ্চিত করেছে, অভিযুক্তদের বেশিরভাগই সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বারটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়া সিসা বারের নেটওয়ার্ক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গুলশান ও বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় একের পর এক সিসা বার খুলে দিতে চলছে রাজনৈতিক তদবির ও প্রভাব খাটানো।
যেমন— বনানীর ‘সেলসিয়াস’ ও ‘এক্সোটিক’ নামের দুইটি সিসা বার পুলিশি প্রহরায় পরিচালিত হতো, যাদের পেছনে ছিলেন ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার প্রাক্তন চিকিৎসকের ছেলে আসিফ মোহাম্মদ নূর।
এসব বারের মালিকানায় জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে রনি চৌধুরী, প্রভাবশালী শেখ পরিবারের সদস্য শেখ ফারিয়া, এবং এখন আলোচনায় থাকা বুশরা আফরিন। তদবির ও রাজনৈতিক প্রভাব: সিসা বাণিজ্যের অন্ধকার দিক ।
সূত্র জানায়, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক পরিচয়, সেলফি ও পার্টির ছবি ব্যবহার করে এসব অবৈধ ব্যবসা রক্ষা করতে তদবির করে চলেছেন।
বিশেষ করে বুশরার স্বামী জাওয়াদ নিজেকে বিএনপি ঘনিষ্ঠ দাবি করে নারকোটিক্স অফিসে নিয়মিত যাতায়াত করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তার গাড়ি বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘ইউনিভার্সাল অটো’, প্রগতি সরণি এলাকায় অবস্থিত।
তাকে ও অন্যদের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কোনও মন্তব্য দেননি।
বদলে যাওয়া নাম, বদলে যাওয়া পরিচয় : রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বেশ কিছু সিসা বার বন্ধ হয়ে গেলেও, অনেকেই নতুন পরিচয়ে, নতুন রাজনৈতিক ছাতার নিচে ফের সক্রিয় হচ্ছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একাধিক সূত্র বলছে, এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অসাধু আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা ও কিছু হলুদ সাংবাদিকের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট, যার ফলে অভিযান হয়, কিন্তু বন্ধ হয় না ব্যবসা।
প্রশ্ন অনেক, জবাব কই? ঢাকার বুকে অবৈধভাবে পরিচালিত সিসা বারের ছায়া জগত ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। হিট অফিসারের সিসা বারে নাম জড়ানো শুধু একটি দৃষ্টান্ত—এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও অশুভ জোট।
নিয়মিত অভিযান, মামলা বা জনমতের চাপে কিছুদিনের জন্য দরজা বন্ধ হলেও,
প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই সিসা বাণিজ্যের আসল গডফাদাররা কে? এবং তাদের রুখবে কে?