জেডটিভিবাংলা ডেস্ক:
আত্মপ্রকাশের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও সাংগঠনিকভাবে এখনও শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পারেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সমন্বয়ক ও আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হলেও গঠনতন্ত্র, উপদেষ্টা পরিষদ ও পূর্ণাঙ্গ কাঠামো গঠনে পিছিয়ে রয়েছে দলটি। তবু এবার নতুন উদ্যমে মাঠে নামছে এনসিপি। সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে তৃণমূলে প্রাণ সঞ্চার করতেই অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হচ্ছে দলটির পুনর্গঠন অভিযান।
ইতোমধ্যে ১০ বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদক নিয়োগ দিয়েছে এনসিপি। দলীয় নিবন্ধন, প্রতীক নির্ধারণ ও সংস্কারের ইস্যু সামনে রেখে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে চায় তারা।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন,‘বর্তমানে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের দুটি প্রধান ইস্যু রয়েছে—একটি দলীয় প্রতীক নিয়ে জটিলতা, অন্যটি সংস্কার। এর পাশাপাশি সাংগঠনিক বিস্তৃতি ঘটাতে সারা দেশে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে কিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেলা-উপজেলায় আমাদের সমন্বয়ক কমিটি রয়েছে। এখন এগুলোকে আহ্বায়ক কমিটিতে রূপান্তর করার কাজ চলছে।’
স্থবির সংগঠন, নতুন টার্গেট
২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশের পর থেকেই এনসিপি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করলেও তা দ্রুত গতি হারায়। অধিকাংশ জেলা ও মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে না পারায় মাঠপর্যায়ে স্থবিরতা দেখা দেয়। তবে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে দলটি এখন সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অক্টোবরে সারাদেশে সাংগঠনিক সফর, আলোচনা সভা ও সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালানো হবে। জেলা ও উপজেলার সমন্বয়ক কমিটিগুলোকে আহ্বায়ক কমিটিতে রূপান্তর করা হবে, যেখানে গণঅভ্যুত্থানে যুক্ত তরুণ নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
আহ্বায়কের আত্মসমালোচনা
গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় তৃণমূলের দুরবস্থার বিষয়টি উঠে আসে। সভায় উপস্থিত নেতারা সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম স্বীকার করেন, ‘আমরা স্বীকার করছি—এক বছরে যতটা শক্তিশালী হওয়া দরকার ছিল, তা পারিনি। নানা বাস্তবতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সাংগঠনিক কাজে ধীরগতি এসেছে। তবে এখন আত্মমূল্যায়নের পর সামনে এগোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
নতুন ১০ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক
সাংগঠনিক গতি আনতে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ১০ নেতাকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রংপুরে ড. আতিক মুজাহিদ, রাজশাহীতে ইমরান ইমন, সিলেটে এহতেশাম হক, ময়মনসিংহে আশেকিন আলম, ঢাকায় সাইফুল্লাহ হায়দার, ফরিদপুরে নিজাম উদ্দীন, চট্টগ্রামে এস এম সুজা উদ্দিন, কুমিল্লায় মো. আতাউল্লাহ, খুলনায় ফরিদুল হক এবং বরিশালে অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন দায়িত্ব পেয়েছেন।
এই নেতাদের এক মাসের মধ্যে সব মহানগর ও জেলার আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এস এম সুজা উদ্দিন বলেন,‘গণঅভ্যুত্থানে যারা সামনে ছিলেন কিন্তু এখন পিছিয়ে গেছেন, তাদের আবার দলে ফিরিয়ে আনব। অভিজ্ঞ রাজনীতিক ও আন্দোলনকর্মীদের যুক্ত করে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলব।’
তিনি আরও জানান, কমিটি গঠনে চাপিয়ে দেওয়া নয়, বরং সংলাপ ও স্থানীয় মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে।
প্রতীক সংকটে ‘শাপলা’তেই অনড় এনসিপি
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত ৫০টি প্রতীক প্রত্যাখ্যান করে এনসিপি ‘শাপলা’ প্রতীকেই অনড় অবস্থান নিয়েছে। দলটি ই-মেইলের মাধ্যমে ইসিকে জানিয়ে দিয়েছে—‘শাপলা’ ছাড়া অন্য কোনো প্রতীক তারা নেবে না।
ভেতরে সতর্ক সুর
তবে দলটির এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘তৃণমূলের গতি না থাকলেও কিছু নেতা নিজেদের নির্বাচনী প্রস্তুতিতে বেশি মনোযোগী। কিন্তু দল শক্তিশালী না হলে কোনো নেতাই টিকবে না।’
সবমিলিয়ে, সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে এবার নতুন উদ্যমে মাঠে নামতে প্রস্তুত এনসিপি। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই শুরু হবে তাদের ‘সাংগঠনিক পুনর্জাগরণ অভিযান’।