October 27, 2025, 8:01 pm
Headline :

কানাডার বেগমপাড়ায় কার কয়টি বাড়ি-ফ্ল্যাট

কানাডার বেগমপাড়ায় কার কয়টি বাড়ি-ফ্ল্যাট

অনলাইন ডেস্ক:

কানাডার বেগমপাড়া দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। প্রথম বড় আলোচনা শুরু হয় ২০২০ সালে, যখন প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরা দুর্নীতির অর্থ পাচার করে স্ত্রী, সন্তান এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে কানাডায় ফ্ল্যাট ও বাড়ি কিনেছেন। সেখানে তারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন।

তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি অর্থ পাচার করেছেন। এ সময় তিনি আরও জানান, কিছু ব্যবসায়ীরাও এই কাজে জড়িত।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারের কাছে ২৮ জনের নামের তালিকা চেয়েছিল। পরে হাইকোর্টও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সম্পদের তথ্য জানতে চেয়েছিল। দুদক জানিয়েছিল, শতাধিক ব্যক্তি প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন। তবে তৎকালীন সরকারের চাপের কারণে এই বিষয়ে তদন্ত কার্যত স্থগিত হয়ে যায়।

তালিকায় থাকা ২৮ জনের মধ্যে বেশির ভাগই সাবেক আমলা। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন: ড. আহমদ কায়কাউস – সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মন্ট্রিল ও টরন্টোয় চারটি বাড়ি। আবু আলম শহীদ খান – স্থানীয় সরকার সচিব হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন, বর্তমানে কারান্তরিন। টরন্টোয় তার বাড়ি রয়েছে। আবুল কালাম আজাদ – সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, টরন্টোয় তিনটি ফ্ল্যাট। নজিবুর রহমান – সাবেক সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান, মিসিসাগায় দুটি বিলাসবহুল বাড়ি। ড. ইকবাল মাহমুদ – দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান, কানাডায় তিনটি বাড়ি। মহিবুল হক – সাবেক বিমান সচিব, তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট। ফজলে কবির – সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, মন্ট্রিলে দুটি ফ্ল্যাট। আবদুর রউফ তালুকদার – সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, টরন্টোয় পাঁচটি বাড়ি ও ফ্ল্যাট।

এ ছাড়া আরও অনেকে রয়েছেন—সাবেক সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম (তিনটি বাড়ি, মন্ট্রিল), জাহাংগীর আলম (দুটি বাড়ি), এম. নিয়াজ উদ্দিন (দুটি বাড়ি ও একটি খামারবাড়ি), প্রশান্ত কুমার হালদার (তিনটি ফ্ল্যাট), নাফিস সরাফাত (চারটি ফ্ল্যাট ও বিনিয়োগ), শহীদ ইসলাম পাপলু (তিনটি বাড়ি ও বিনিয়োগ), সাবেক এমপি তানভীর ইমাম (দুটি ফ্ল্যাট), মতিউর রহমান (তিনটি বাড়ি), নাইমুল ইসলাম খান (একটি ফ্ল্যাট), নজরুল ইসলাম মজুমদার (চারটি বাড়ি ও বিনিয়োগ), শামীম ওসমান (একটি বাড়ি), বেনজীর আহমেদের মেয়ে (দুটি বাড়ি), সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা (একটি ফ্ল্যাট), শাহরিয়ার আলম (তিনটি বাড়ি ও বিনিয়োগ)।

তালিকায় কয়েকজন ব্যবসায়ীও রয়েছেন, যাদের পরিবারের সদস্যরা কানাডায় অবস্থান করছেন। উল্লেখযোগ্য একজন ব্যক্তির পরিবারের নামে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।

সাবেক সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মন্ট্রিলে রয়েছে তিনটি বাড়ি। সাবেক সচিব জাহাংগীর আলমের কানাডায় দুটি বাড়ি। সাবেক সচিব এম. নিয়াজ উদ্দিনের দুটি বাড়ি এবং একটি খামারবাড়ি।

সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার হালদার তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক। নাফিস সরাফতের রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট এবং বিনিয়োগ (শেয়ার)। শহীদ ইসলাম পাপলুর রয়েছে তিনটি বাড়ি ও বিনিয়োগ। সাবেক এমপি তানভীর ইমামের রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের তিনটি বাড়ি রয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খানের রয়েছে একটি ফ্ল্যাট। নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের রয়েছে চারটি বাড়ি এবং বিনিয়োগ। শামীম ওসমানের রয়েছে একটি বাড়ি। পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদে মেয়ের নামে দুটি বাড়ি রয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি বিচারপতি এস কে সিনহার মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের তিনটি বাড়ি ও বিনিয়োগ রয়েছে।

এ তালিকায় কয়েকজন ব্যবসায়ীও রয়েছেন। তাদের পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য কানাডায় থাকেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি ও তার পরিবারের নামে আছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, এসব ব্যক্তি কানাডায় রাজকীয় জীবনযাপন করছেন, যদিও তাদের বৈধ আয়ের উৎস নেই। ফলে স্থানীয় কমিউনিটিতে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও উদ্বেগ। সোমবার (৬ অক্টোবর) দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

স্থানীয় প্রবাসী ও কমিউনিটি সূত্র জানাচ্ছেন, এসব প্রভাবশালী ব্যক্তি কানাডায় রাজকীয় জীবনযাপন করছেন, যদিও তাদের বৈধ আয়ের উৎস নেই। এতে কমিউনিটিতে ক্ষোভ, সন্দেহ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরণের বিলাসবহুল জীবন ও অগণিত সম্পদ বিদেশে প্রবাসীদের মধ্যে ন্যায্য ও বৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থের ওপরও প্রশ্ন তুলেছে।

তবে, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তদন্ত বা সর্বশেষ আপডেট এখনো আলোচনায় এসেছে কি না, তা নিশ্চিত নয়। বিষয়টি বাংলাদেশের সরকারি এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ধরে নজরকাড়া একটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page