October 27, 2025, 9:31 pm
Headline :

জাতিসংঘে ড. ইউনূস: মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ জরুরি

প্রথমত, রাখাইনের যুক্তিসংগত স্থিতিশীলতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তব রোডম্যাপ তৈরি করুন; দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার এবং আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করুন, যারা সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন এবং যারা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তাদের দিয়ে শুরু করুন; তৃতীয়ত, রাখাইনকে স্থিতিশীল করার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন একত্রিত করুন এবং স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি স্থাপন করুন; চতুর্থত, রাখাইন সমাজ এবং শাসনব্যবস্থায় রোহিঙ্গাদের টেকসই একীকরণের জন্য আস্থা তৈরির ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করুন; পঞ্চম, যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার সম্পূর্ণ অর্থায়নের জন্য দাতাদের অবদান একত্রিত করুন; ষষ্ঠত, জবাবদিহিতা এবং পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার অনুসরণ করুন; সপ্তম, মাদক-অর্থনীতি ভেঙে ফেলা এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা।

অনলাইন ডেস্ক,

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, সংকটের মূল উৎস মিয়ানমারেই এবং সমাধানও সেখানেই খুঁজতে হবে — রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি না হলে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।

ড. ইউনূস বলেন, গণহত্যা শুরু হওয়ার আট বছর পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে এবং এ সংকট নিরসনের উদ্যোগহীনতা প্রশাসনিক ও আন্তর্জাতিক তহবিল উভয় ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান। তহবিল ঘাটতির পরিস্থিতিতে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ ও টেকসই বিকল্প হিসেবে দ্রুত ও সুষ্ঠু প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত—যা আন্তর্জাতিক সংরক্ষণের তুলনায় অনেকে ক্ষেত্রে কম ব্যয়সাপেক্ষ হবে।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা সবসময়ই নিজেদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে; বিশেষত যারা সংঘাত ঘটে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের প্রথম প্রাধান্য দিয়ে রাখাইন ফিরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা উচিত। একই সঙ্গে ড. ইউনূস বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশের ফলে দেশের ওপর পড়া আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত চাপের কথা উল্লেখ করে বললেন, অতিরিক্ত অপরাধ ও মাদকের প্রবাহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামো হুমকির মুখে পড়বে।

প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করে দেন যে, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের নিয়মিতভাবে কারোর দেশে রোজগার নিশ্চিত করা কঠিন; তাই স্থায়ী সমাধান হার না মানা অগ্রাধিকারের দাবি রাখে। বক্তব্যের শেষভাগে তিনি বিশ্বকে আহ্বান জানান—রোহিঙ্গাদের বাড়ি ফেরানো অপেক্ষা করার বিষয় নয়; এখনই সকলে একযোগে ক্ষণস্থায়ী নয় বরং চূড়ান্ত সমাধানের প্রতিশ্রুতি নিতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতার অঙ্গীকারও প্রকাশ করা হয়।

নীচে ড. ইউনূসের প্রস্তাবিত সাত দফা সুপারিশ সংক্ষেপে দেওয়া হলো—যেগুলো রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের উদ্দেশ্যে তিনি জাতিসংঘে তুলে ধরেছেন:

রাখাইনের যুক্তিযুক্ত স্থিতিশীলতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাবান প্রত্যাবাসনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরি করুন।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করুন; প্রথমেই তারা যারা সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছে বা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত।

রাখাইন স্থিতিশীল করণের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন একত্রিত করুন এবং স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি স্থাপন করুন।

রাখাইন সমাজ ও শাসনব্যবস্থায় রোহিঙ্গাদের টেকসই একীকরণের জন্য আস্থা গঠন ও বিশ্বাসজাগ্রণের ব্যবস্থা সমর্থন করুন।

যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার সম্পূর্ণ অর্থায়নের জন্য দাতাদের অবদান একত্রিত করুন।

জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন এবং পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার বাস্তবায়ন করুন।

মাদক-অর্থনীতি ভেঙে ফেলা এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে যুগোপযোগী ব্যবস্থা নিন।

ড. ইউনূসের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় ভূমিকা পালন এবং দ্রুত ও সুসংহত প্রতিক্রিয়ার আহ্বান ব্যক্ত করা হয়েছে—যাতে রাখাইনে স্থিতিশীলতা ফিরে এসে রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page