নিজস্ব প্রতিবেদক:
সকাল হতেই শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকার রাস্তাগুলো যেন রূপ নেয় নদী কিংবা খালে। কর্মমুখর রাজধানী ঢাকার সকালটা পরিণত হয় পানিতে ভাসা এক দুর্ভোগের দৃশ্যে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোর পৌনে ৬টা থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে অল্প সময়েই রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি—সবখানেই জমে যায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শামীমা নাসরিন প্রতিদিনের মতো সকালে বেরিয়েছিলেন অফিসের উদ্দেশ্যে। কিন্তু কারওয়ান বাজারে যাওয়ার পথে গ্রিনরোডে তাকে হাঁটুপানি ভেঙে এগোতে হয়েছে।
অন্যদিকে, মতিঝিলে কর্মরত শিপন আহম্মেদের অভিজ্ঞতা ছিল আরও ভয়াবহ। তিনি জানান, “ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল, মালিবাগ—সব জায়গাতেই কোমরপানি। রিকশাও চলছিল না। কোনোমতে অফিস পৌঁছেছি।”
সকাল সাড়ে ৭টার দিকেই ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, নিউমার্কেট, আসাদগেট, জিগাতলা, গ্রিনরোডসহ ঢাকার একাধিক এলাকায় দেখা যায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা। অনেক জায়গায় যান চলাচল প্রায় অচল হয়ে পড়ে। বাস, রিকশা, প্রাইভেটকার—সব যানবাহনই ধীরগতিতে চলছে, কোথাও কোথাও বন্ধও হয়ে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৪ মিলিমিটার। আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানান, “উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপের কারণে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শুধু ঢাকা নয়, দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও একই অবস্থা।”
তিনি আরও জানান, সারাদিনই আকাশ মেঘলা থাকতে পারে এবং আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোরের বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কম ছিল বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক। ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের স্কুলে পৌঁছানো ছিল আজ রীতিমতো এক অভিযান।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সকাল থেকে দোকানে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। অনেকেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা পিছিয়ে দিয়েছেন।
প্রতিবছর এমন দৃশ্যই দেখা যায়। কিন্তু ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগের অভাব এখনও প্রকট। পরিকল্পনাহীন ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অব্যবস্থাপনার চিত্র আজ আবারও নগরবাসীকে নতুন করে ভোগান্তিতে ফেলে দিল।