অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ রেলওয়ের পুরোনো লোকোমোটিভ সংকট কাটাতে বড় সহায়তা আসছে চীন থেকে। দেশটি বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ২০টি মিটারগেজ (এমজি) ডিজেল-ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ দিচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা দেবে চীন এবং বাকি অর্থ আসবে সরকারি তহবিল থেকে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিকল্পনা
রেল মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। শুধু লোকোমোটিভ সরবরাহ নয়—এর সঙ্গে খুচরা যন্ত্রাংশ, যন্ত্রপাতি এবং বাংলাদেশি প্রকৌশলী ও মেকানিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে। ফলে জ্ঞান ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি হবে।
কেন জরুরি নতুন লোকোমোটিভ
বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে বর্তমানে মোট ৩০৬টি লোকোমোটিভ রয়েছে। এর মধ্যে ১৭৪টি মিটারগেজ, যাদের বেশিরভাগই আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। তথ্য বলছে—৭১% এমজি লোকোমোটিভ নকশাগত আয়ুষ্কাল অতিক্রম করেছে।
৬৮টি চলছে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। ৮৪টি ব্যবহৃত হচ্ছে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।
এমন পুরোনো ইঞ্জিন সচল রাখা ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ঘন ঘন বিকল হওয়ায় ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, জ্বালানি খরচও বাড়ছে। ফলে যাত্রী ও মালবাহী পরিবহনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বাড়তি চাহিদা, কমছে সেবা
২০২০ সালের ওয়ার্কিং টাইম টেবিল অনুযায়ী, শুধু ঢাকা, চট্টগ্রাম ও লালমনিরহাট বিভাগেই এমজি রুটে ২০৩টি লোকোমোটিভের দরকার। বাস্তবে সক্রিয় আছে মাত্র ১৮২টি। যাত্রী ও মালবাহী পরিবহনের চাহিদা বাড়লেও সংকটের কারণে আন্তঃনগর ট্রেনকে অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে, ফলে মালবাহী ও লোকাল ট্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবতা
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় রেল পরিবহন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও, পূর্ববর্তী সময়ে লোকোমোটিভ কেনার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১১ সালে ৭০টি এমজি লোকোমোটিভ কেনার পরিকল্পনা অর্থসংকটে বাতিল হয়ে যায়। ২০১৭–২০২১ মেয়াদে সুপারিশ করা হলেও এখন পর্যন্ত কেনা হয়েছে মাত্র ৩০টি নতুন ইঞ্জিন।
নতুন ইঞ্জিনের সম্ভাবনা
রেল কর্মকর্তাদের মতে, চীনের এই ২০টি লোকোমোটিভ আসলে যাত্রী ও মালবাহী উভয় সেবায় কিছুটা স্বস্তি আসবে। রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমবে, জ্বালানি সাশ্রয় হবে এবং নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ—উভয় ক্ষেত্রেই আরও বড় বিনিয়োগ দরকার, নইলে রেলওয়ের আধুনিকায়ন ও বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়বে।