নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে ফের নির্বাচনী উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে চাকসু ভবনে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রক্রিয়ার যাত্রা শুরু হয়। আগামী মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন এবং বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তা জমা দেওয়ার সুযোগ থাকছে।
নতুন ভোটার যুক্ত
এদিকে চাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ তালিকায় নতুন করে ১ হাজার ৭৬৮ শিক্ষার্থী যুক্ত হয়েছেন। এতে মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৭ হাজার ৬৩৪ জনে। তবে এদের মধ্যে কতজন ছাত্র এবং কতজন ছাত্রী—সেই বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি। কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী জানিয়েছেন, আগামী এক-দুই দিনের মধ্যেই এ তথ্য প্রকাশ করা হবে।
মনোনয়নপত্রের নিয়ম-কানুন
এবারের নির্বাচনে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ছাড়াও এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও প্রার্থী হতে পারবেন। তবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীদের অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে করা ডোপ টেস্টের (মাদক পরীক্ষা) রিপোর্ট জমা দিতে হবে। প্রার্থীরা সর্বোচ্চ পাঁচজন সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা বা সংগ্রহ করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম আশরাফুল হক সিদ্দিকী জানান, কেন্দ্রীয় সংসদের মনোনয়নপত্রের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা হল সংসদের জন্য ২০০ টাকা। মনোনয়ন নিতে হলে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী ভোটার আইডি নম্বর এবং পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীকে ছবি ও ডোপ টেস্ট রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
নির্বাচনী তফসিল ও ভোটগ্রহণ
গত ২৮ আগস্ট প্রায় ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। যদিও তার দুই দিন পর ৩০ ও ৩১ আগস্ট স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় নির্বাচনী উত্তাপ কিছুটা কমে গিয়েছিল, তবে মনোনয়ন বিতরণ শুরু হতেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফের নির্বাচনী আমেজ ফিরে এসেছে।
তফসিল অনুযায়ী: ২১ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। ২৩ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়। ২৫ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ। ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীরা ডাকসুর মতোই ওএমআর (OMR) পদ্ধতিতে ভোট দেবেন।
গঠনতন্ত্রে বড় পরিবর্তন
চাকসু নির্বাচনের আগে গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। এতে চার সহ-সম্পাদকের পদ বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে নতুন চারটি পদ। কেন্দ্রীয় সংসদের মোট পদসমূহ হলো— সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, খেলাধুলা সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক, সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক, গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক, ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক (নারীদের জন্য সংরক্ষিত), স্বাস্থ্য সম্পাদক, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক এবং পাঁচজন নির্বাহী সদস্য।
একইভাবে হল সংসদের গঠনতন্ত্রেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন হল সংসদের পদসমূহ হবে— সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, খেলাধুলা সম্পাদক, সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, সমাজসেবা-পরিবেশ-মানবাধিকার সম্পাদক, বিজ্ঞান-গবেষণা-তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক, স্বাস্থ্য সম্পাদক, রিডিংরুম-ডাইনিং-হল লাইব্রেরি সম্পাদক, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক এবং পাঁচজন নির্বাহী সদস্য।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান
উল্লেখ্য, সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭০ সালে প্রথম চাকসু কেবিনেট গঠিত হয়। এরপর ১৯৭১, ১৯৭৩, ১৯৮০ ও ১৯৯০ সালে মোট পাঁচবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ ৩৫ বছর তা বন্ধ ছিল। ফলে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাট আগ্রহ তৈরি হয়েছে।