নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের শিক্ষা, গবেষণা ও রাজনীতির অঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে পরিচিত বদরুদ্দীন উমর আর নেই। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম জানান, সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তিনি মারা গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন বদরুদ্দীন উমর।
বদরুদ্দীন উমর জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর, ব্রিটিশ ভারতের বর্ধমান শহরে। তার প্রারম্ভিক শিক্ষা জীবন এবং উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষাজগতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি এবং ১৯৫৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষা জীবনের পর ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে পিপিই ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং শিক্ষাজীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
গভর্নর মোনায়েম খানের স্বৈরতান্ত্রিক নীতি ও আচরণের প্রতিবাদে ১৯৬৮ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ত্যাগ করেন। এরপর রাজনীতি, গবেষণা ও লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। তার জীবনযাত্রা থেকে স্পষ্ট যে, শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতার সমন্বয়ই ছিল তার লক্ষ্য।
২০০৩ সালে তিনি গড়ে তোলেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দেশের রাজনীতি ও সমাজচর্চার ক্ষেত্রে তার নেতৃত্বমূলক ভূমিকা অবিস্মরণীয়।
বদরুদ্দীন উমরের গবেষণাগ্রন্থগুলি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন এবং তৎকালীন রাজনীতির ওপর তার লেখা প্রমাণ করে, তিনি ছিলেন সমন্বিত ও অগ্রগণ্য গবেষক। তার লেখা গবেষণা ও বইসমূহ সমাজবিজ্ঞান ও রাজনীতিশাস্ত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত।
উমরের মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, গবেষণা ও শিক্ষাক্ষেত্রের নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেছেন। তার জীবন ও অবদানের গল্প নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা, নেতৃত্ব এবং সংগ্রামের উদাহরণ হিসেবে অনুপ্রাণিত করবে।
বদরুদ্দীন উমরের জীবনকাল, ৯৪ বছর, এক দীর্ঘ অধ্যায় হিসেবে শেষ হলো। তবে তার গবেষণা, রাজনৈতিক কর্মসূচি ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড আজও দেশের অঙ্গনে আলোছায়া রেখে যাবে।