নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দ্বন্দ্ব, মতপার্থক্য ও অস্থিরতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিএনপি যেখানে প্রচলিত সরাসরি ভোটাধিকারকেই একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ বলে মনে করছে, সেখানে জামায়াতে ইসলামী দৃঢ়ভাবে সংখ্যানুপাতিক (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব – জনসংযোগ) পদ্ধতির দাবি তুলছে।
বিএনপির অবস্থান: সরাসরি ভোটই চূড়ান্ত সমাধান, বিএনপির নেতারা বারবার বলছেন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হলো প্রচলিত ভোটব্যবস্থা। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মন্তব্য করেছেন: “একটা নতুন প্রস্তাব এসেছে—সংখ্যানুপাতে ভোটের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি, এতদিন যেভাবে জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার কথা বলেছি, তা ঐ প্রক্রিয়ায় পূর্ণতা পায় না। তাই আমরা বলছি, ভোট সরাসরি হতে হবে।”
বিএনপির মতে, সরকার যদি আন্তরিক থাকে এবং নির্বাচন কমিশনও সেই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে, তবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন কোনোভাবেই অসম্ভব নয়।
জামায়াতের অবস্থান: পিআর পদ্ধতি ছাড়া প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বলছে, নির্বাচনকে সত্যিকার অর্থে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে পিআর পদ্ধতি অপরিহার্য। তাদের মতে, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হবে।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন: “আমি মনে করি, এ ধরনের ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য আসা জরুরি। সরকার বা ইসি যদি এককভাবে পরিকল্পিত নির্বাচনের দিকে এগোয়, তাহলে সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের সুষ্ঠু নির্বাচনের সক্ষমতা আছে বলেও মনে করি না।”
দ্বন্দ্বের বিস্তার: অন্য দলগুলোর অবস্থান, বিএনপি ও জামায়াতের মতো বড় দলের ভিন্নমতের পাশাপাশি, অন্যান্য রাজনৈতিক জোটেও বিভাজন বাড়ছে। গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে দ্বন্দ্ব ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। এতে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে আকার ধারণ করছে।
দ্রুত নির্বাচনে অনড় বিএনপি, প্রশ্ন তুলছে জামায়াত: সবমিলিয়ে বিএনপি এখন দ্রুত নির্বাচনের দাবিতেই অটল। তারা মাথা ঘামাচ্ছে না অন্য দলগুলোর প্রস্তাবিত সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে। অপরদিকে জামায়াত মনে করছে, সরকারের বর্তমান অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।
তবে ভিন্নমতের মাঝেও দুই দল এক বিষয়ে একমত— দেশের জটিল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক ঐক্য অপরিহার্য।