নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও মির্জা আব্বাসসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের ১৪৭ জন নেতার বিরুদ্ধে দায়মুক্তির সুপারিশ করেছে পুলিশ।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) আদালত সূত্রে জানা যায়, পৃথক দুই মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের দিন ধার্য
মামলাগুলোর মধ্যে একটিতে মির্জা ফখরুলসহ ৭০ জনের বিষয়ে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর এবং অন্যটিতে ফখরুলসহ ৭৭ জনের বিষয়ে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের দিন ধার্য করেছে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। আদালত প্রতিবেদনের সুপারিশ গ্রহণ করলে আসামিরা মামলার দায় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্ত হবেন।
মামলার পটভূমি
২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির তারিখ ধার্য ছিল হাইকোর্টে। এর আগের দিন অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানাধীন দুটি পৃথক স্থানে মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
প্রথম মামলা
শাহবাগ থানার হাইকোর্ট মাজার গেট সংলগ্ন এলাকায় একদল দুষ্কৃতিকারী মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় থানার এসআই ইদ্রিস আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে চলতি বছরের ১০ মে তদন্ত কর্মকর্তা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাসসহ ৭০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
দ্বিতীয় মামলা
একই দিন শাহবাগ থানাধীন বার কাউন্সিলের নির্মাণাধীন ফটকের সামনে আরেকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, জামিন শুনানির কার্যক্রম প্রভাবিত করা ও বিচার বিভাগকে চাপের মুখে ফেলার উদ্দেশ্যে এই অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় থানার এসআই শামছুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে একইভাবে ফখরুল, গয়েশ্বর, আব্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ৭৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
উল্লেখযোগ্য আসামিদের নাম
মামলার আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন—বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী খান সোহেল, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু
আইনজীবীর প্রতিক্রিয়া
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, “এই মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ও হয়রানি করার জন্য দায়ের করা হয়েছিল। তদন্তে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাই পুলিশ আদালতে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করেছে।”
প্রেক্ষাপট
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে বিএনপির অনেক নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর মধ্যে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলাগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবেই দেখছে বিএনপি। আদালতে দাখিল হওয়া সাম্প্রতিক চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিএনপি নেতারা এটিকে রাজনৈতিক হয়রানির প্রমাণ হিসেবে দাবি করছেন।