September 10, 2025, 10:52 pm
Headline :
আন্দোলন হাইজ্যাক হয়েছে, দাবি নেপালের তরুণদের নেপালে আটক বাংলাদেশিরা নিরাপদ, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরবেন কুড়িগ্রামে বিজিবির অভিযান: ৭ দিনে ২ কোটি টাকার মাদক ও পণ্য জব্দ ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরণের বাণিজ্য ও আকাশসীমা বন্ধ করেছে তুরস্ক গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার রাজশাহীতে কলাবাগান থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধারনিজস্ব প্রতিবেদক ১৬ গেট দিয়ে সাড়ে ৩ ফুট করে ছাড়া হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার যোগাযোগ বন্ধ ডাকসু নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়ী ‘জুলাই কন্যা’ তন্বী ডাকসুর জয়কে ‌‘জুলাই প্রজন্মের বিজয়’ বললেন নবনির্বাচিত ভিপি

বারিধারায় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প: ২৭ কোটির অপচয়, নতুন করে ৫০ কোটি টাকার উদ্যোগ

বারিধারায় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প: ২৭ কোটির অপচয়, নতুন করে ৫০ কোটি টাকার উদ্যোগ
ছবি: সমকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর গুলশান-ভাটারার উত্তর বারিধারায় আট বিঘা জমিতে প্রায় আড়াই দশক ধরে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও কোনো প্রকল্পই বাস্তবায়ন হয়নি। কিডনি হাসপাতাল থেকে শুরু করে আইটি ইনস্টিটিউট, আবার হাউজিং প্রকল্প—সবকিছু মিলিয়ে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে অন্তত ২৭ কোটি টাকা। অথচ কোনো স্থায়ী অবকাঠামো দাঁড়ায়নি। তবুও এবার মন্ত্রণালয় নতুন করে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণে ঝুঁকেছে, যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

জমি অধিগ্রহণ ও পরিকল্পনা পরিবর্তনের ইতিহাস

২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রবাসীদের জন্য কিডনি হাসপাতাল ও আইটি ইনস্টিটিউট নির্মাণে ১৫১ দশমিক ৫৪ কাঠা জমি কিনে নেয়। পরে হাউজিং প্রকল্প করার সিদ্ধান্তে আরও ১৫ দশমিক ৭৪ কাঠা জমি যোগ হয়। বর্তমানে জমিটির বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটিরও বেশি।

২০০৪ সালে ছয়টি ভবন নির্মাণের জন্য দুইটি হাউজিং কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তবে নির্মাণমূল্য বৃদ্ধির জটিলতায় কিছু ফ্রেমস্ট্রাকচার দাঁড়ালেও কাজ থেমে যায়। ইতিমধ্যে প্রায় ২৬ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়। শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।

নতুন হাসপাতাল পরিকল্পনা

২০২৪ সালের এপ্রিলে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এক অনুষ্ঠানে বারিধারার জমিতে নতুন হাসপাতাল করার ঘোষণা দেন। এরপর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড দ্রুত ৪৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত।

এবারের প্রকল্পে বোর্ডের ৫১ শতাংশ এবং প্রবাসীদের ৪৯ শতাংশ শেয়ার রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রকল্প প্রণয়নে সমীক্ষা, নতুন মাস্টারপ্ল্যান বা কারিগরি বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়নি। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে (ডিপিএম) কাজ শুরু হচ্ছে।

আইন ভঙ্গ ও বিতর্ক

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, বোর্ড সভা কিংবা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ অনুমোদন ছাড়াই “প্রবাসীকল্যাণ সার্ভিস পিএলসি” নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। যা বোর্ড আইনের পরিপন্থী। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ বাড়ছে।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, “বারিধারার মতো জায়গায় মাত্র ২০ শয্যার হাসপাতাল কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। সেখানে ৩০০ শয্যার মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে প্রকল্প করা উচিত।”

দায়সারা প্রকল্প প্রণয়ন

ডিপিপি প্রস্তুত করেছেন বোর্ডের কয়েকজন মধ্য পর্যায়ের কর্মকর্তা, যাদের এ ধরনের অভিজ্ঞতা নেই। তাদের দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তারা শুধু কাঠামো দেখে প্রস্তাব তৈরি করেছেন।

বোর্ডের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া জানান,

“প্রথম পর্যায়ে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হলেও পরবর্তীতে এটি দুই হাজার কোটিতে গড়াবে।”

অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া দাবি করেছেন, এ বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণা নেই।

প্রশ্নের মুখে প্রবাসী কল্যাণ

বারিধারার মতো সম্ভাবনাময় স্থানে দীর্ঘদিন ধরে অপচয় হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। এবারও মাস্টারপ্ল্যান ও নীতিনির্ধারণী অনুমোদন ছাড়াই মাত্র ২০ শয্যার হাসপাতালে বিপুল অর্থ ব্যয় হওয়া নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। প্রবাসীদের অর্থ দিয়ে এমন অপরিকল্পিত প্রকল্প সত্যিই তাদের উপকারে আসবে কি না—সে নিয়েও চলছে তীব্র সমালোচনা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page