অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) এর সঙ্গে দরকষাকষির আলোচনায় বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্কের হার ২০ শতাংশ নির্ধারিত হলেও বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো চুক্তি হয়নি। বর্তমানে চুক্তির খসড়া তৈরি করছে ইউএসটিআর। খসড়া তৈরির পর সেটি বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা দেখে ও মতামত দিয়ে পুনরায় ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্রে।
এরপর সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করে যুক্তরাষ্ট্রে চুক্তিতে সই করবে উভয়পক্ষ। সব মিলিয়ে দু’-তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এ প্রেক্ষিতে চলতি আগস্টের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চূড়ান্ত শুল্ক চুক্তি হতে পারে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ৭ আগস্ট থেকে।
আর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর সার্বিকভাবে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কহার প্রায় ৩৬ শতাংশ দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রসঙ্গত: ইউএসটিআর এর সঙ্গে সমাপনী বৈঠক শেষে গত শুক্রবার (০১ আগস্ট) রাতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজার সঙ্গে আলাপকালে যৌথ বিবৃতির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন।
এ সময় ‘২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই’- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভর করবে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতার ওপর।
এদিকে ‘চুক্তিতে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু নেই’- এমন দাবি করে ওই আলাপে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আলোচনার মাধ্যমে স্বার্থবিরোধী বিষয়গুলো থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে এসেছে। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিলে সক্ষমতার ঘাটতি ঘটবে। এতে বাণিজ্য চুক্তি করেও কোনো লাভ হবে না। স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে যদি বাণিজ্য সক্ষমতা কমে যায় বা ক্ষুদ্র অর্থনীতির কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে তো কোনোভাবেই পালনযোগ্য নয় সেই চুক্তি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জুনে এনডিএ সই করার পর বাণিজ্যচুক্তি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কিছু শর্ত পাঠায় বাংলাদেশের কাছে। এর মধ্যে শুল্ক, অশুল্ক, ডিজিটাল বাণিজ্য ও প্রযুক্তি, উৎস বিধি, জাতীয় নিরাপত্তা ও বাণিজ্যবিষয়ক শর্ত রয়েছে। শর্তের মধ্যে চীন থেকে পণ্য আমদানি কমানোর কথা বলা আছে। আছে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য অবাধে যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে ও দেশটির বিভিন্ন মানসনদ যেন বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়া হয়, সে কথাও।
অন্যান্যের মধ্যে চীনের বদলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক পণ্য আমদানি বাড়ানো, বেসামরিক উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশ আমদানি বাড়ানো, দেশটি থেকে জ্বালানি তেল ও ভোজ্যতেল আমদানি বৃদ্ধি, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা, গম আমদানি বাড়ানোর শর্ত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) তা জানানোর কথাও বলা হয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ির সহজ প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি গাড়ি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে বাড়তি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না। জানা গেছে, ইপিজেডে শ্রমিকদের সংগঠন করার পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করা এবং ন্যায্য দাবি আদায়ে জড়িত পোশাকশ্রমিক ও নেতাদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহারের শর্তও রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টারের সঙ্গে আলাপকালে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, উড়োজাহাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপিতও হয়নি। বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা সক্ষমতা না বাড়িয়ে উড়োজাহাজ কিনে তেমন লাভ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার সেই চেষ্টা করছে। বিমানের পক্ষে অতিরিক্ত ১ কোটি যাত্রী পরিবহনের সুযোগ আছে। সেই বিবেচনায় ২৫টি বিমান খুব বেশি কিছু নয়। কোম্পানিটি গত বছর ১২টি উড়োজাহাজ বানিয়েছে।
এ চুক্তি অনুযায়ী তারা হয়তো ২০৩৭ সালে প্রথম উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারবে। কৃষি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জ্বালানি ও কৃষিপণ্যের ভিত্তিতেই বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কথা বলেছে বাংলাদেশ। এসব পণ্য এমনিতেই আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশ বছরে ১ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র কৃষিপণ্যের বৃহৎ উৎপাদক। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬০০ কোটি ডলারের মতো। তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, গমজাতীয় পণ্য আমদানি বাড়িয়ে ২০০ কোটি ডলার ঘাটতি কমানোর চেষ্টা চলছে।